২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আশুলিয়ায় সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

-

ঢাকার আশুলিয়ার বেশির ভাগ শাখা সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে অবস্থা এতটাই নাজুক হয় যে, হেঁটে চলাচলও দায় হয়ে দাঁড়ায়। কোথাও কোথাও জুতা হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয় চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তি নিয়ে। এমন অবস্থার জন্য অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছে করোনার কারণে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের সংস্কারকাজ আটকে রয়েছে। তবে শিগগিরই রাস্তাগুলো মেরামত করা হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, আশুলিয়ার জিরাবো-বিশমাইল সড়ক, ভাদাইল-ডিইপিজেড সড়ক, বাইশমাইল-নলাম সড়ক, জামগড়া-বাগবাড়ি-কাশিমপুর সড়ক, নবীনগর-কুরগাঁও সড়ক, গোহাইলবাড়ি-গাজীবাড়ি সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়ক দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
জিরাবো-বিশমাইল আঞ্চলিক সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা, বাস-ট্রাক ও বিভিন্ন শিল্পকারখানার যানবাহনসহ হাজারো পরিবহন চলাচল করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পুরো রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে সেখানে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জিরাব থেকে কাঠগড়া আমতলা পর্যন্ত এ সড়কের অবস্থা এতটাই নাজুক যে রিকশা-ভ্যানতো দূরের কথা, খালি পায়ে হেঁটে চলাচলও দুরূহ ব্যাপার। প্রতিদিনই এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। উল্টে যাচ্ছে রিকশা, অটোরিকশা এবং রাস্তার মাঝখানে আটকে যাচ্ছে ভারী যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। আর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত লাখো মানুষের।
ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মোতালেব নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিগত পাঁচ বছর আগে এ রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। সড়ক সংস্কারের সময় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং তিতাসের গ্যাসলাইনের বসাতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তায় পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়ে এমন অবস্থায় এসেছে। তিনি যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
এ দিকে, আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ডিইপিজেড থেকে ডিইপিজেড-ভাদাইল সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে, জামগড়া চৌরাস্তা থেকে জামগড়া-বাগবাড়ি-কাশিমপুর সড়কটির বেহাল অবস্থা প্রায় পাঁচ বছর ধরে, গোহাইলবাড়ি-রণস্থল সড়কের একই অবস্থা দীর্ঘদিনের। সড়কগুলো এ অঞ্চলের অন্যতম শাখা সড়ক। এ সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ। সড়কগুলোতে মাসের ৩০ দিন বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পানির নিচে তলিয়ে থাকে এবং কাদায় যুক্ত থাকে।
সরেজমিন দেখা যায়, ডিইপিজেড-ভাদাইল শাখা সড়কটি দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। একটু বৃষ্টিতেই এ সড়কে হাঁটু পানি জমে থাকে। সড়ক থেকে পানি নামার কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ইট-বালু ফেলে কিছুটা দুর্ভোগ নিবারণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের সময় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করায় এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
ভাদাইল এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাসহ (ডিইপিজেড) বিভিন্ন পোশাক কারখানায় লাখ লাখ মানুষ চাকরি করেন। যার অধিকাংশ শ্রমিক বসবাস করে ভাদাইল এলাকায়। ভাদাইল থেকে ইপিজেডে আসার একমাত্র রাস্তা বা সড়ক এটি। এর কোনো বিকল্প সড়ক নেই। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে হাঁটু পানি জমে যায়। পানি জমে থাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে চায় না। যদিও কোনো রিকশা বা অটোরিকশা যেতে রাজি হয় তবে ভাড়া দিতে হয় দ্বিগুণ। এর পরও কর্মস্থলে গিয়ে ভিজা কাপড় পাল্টিয়ে কাজে যোগদান করতে হয় তাদের। সঠিক সময় কাজে যোগদান করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস প্রতি মাসেই কাটা যায় একমাত্র এ রাস্তাটির কারণে। তবুও বাধ্য হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক দুর্ভোগ সহ্য করে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন।
সড়কের পাশের দোকানিরা জানান, সড়কের জমে থাকা ময়লাপানি দোকানে ঢুকে পড়ে। প্রতিদিন দোকানে জমে থাকা পানি সেচে ফেলতে হয়। সড়কের বেহাল দশার জন্য ক্রেতারা খুব প্রয়োজন না হলে আসতে চান না।
জামগড়া চৌরাস্তা থেকে জামগড়া-বাগবাড়ি-কাশিমপুর শাখা সড়কটির প্রায় দেড় কিলোমিটার খানাখন্দেও পানি জমে আছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েন ওই অঞ্চলের বসবাসকারী হাজার হাজার শ্রমিকসহ এলাকাবাসী। খানাখন্দ ভরা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। চরম ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করছেন শ্রমিকরা।
এ সড়কে রিকশা চালান রফিকুল ইসলাম। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘদিনের বেহাল অবস্থার কারণে সড়কটি দিয়ে চলাচল মুশকিল হয়ে পড়ে। মাঝে মধ্যেই রিকশা নষ্ট হয়। এ সড়কে রিকশা চালিয়ে লাভের থেকে লোকসান গুনতে হয় বেশি। দিনের পর দিন সড়কটির এমন অবস্থা থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এদিকে, আশুলিয়ার গোহাইলবাড়ি-গাজীবাড়ি সড়কটি স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার কিংবা ইট সলিং করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ সড়কটি দিয়ে গাজীবাড়ি ও বাইদগাঁও, গোহাইলবাড়ি উত্তরপাড়া এলাকার কয়েক হাজার মানুষ চলচল করে। বর্ষা মৌসুমে এ সড়কটি দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করা দুরূহ। কাদায় যুক্ত হয়ে পুরো রাস্তা পিচ্ছিল অবস্থায় থাকে। চরম ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তাটি দিয়ে মানুষজন চলাচল করলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো রকম রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে জানান এ অঞ্চলের মানুষজন।
আশুলিয়ার বাইশমাইল-নলাম সড়কের বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের থাকলেও এটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ভেঙে গিয়ে পানি জমে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কটির উভয় পাশেই রয়েছে একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা এবং একটি ভূমি অফিসসহ বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানের লোকজন অতি কষ্টে যাতায়াত করে।
গোহাইলবাড়ি-গাজীবাড়ি সড়ক সম্পর্কে শিমুলিয়া নবীন সংঘের সভাপতি মো: দেলোয়ার হাসান জানান, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয়। বিশেষ করে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রিকশা-অটোরিকশা এবং শ্রমিকবাহী বাস চলাচল করে প্রতিনিয়ত। অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই মানুষজন চলাচল করছে সড়কটি দিয়ে। মানুষের কথা বিবেচনা করে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, জিরাবো-বিশমাইল সড়কটিতে পরিকল্পিত কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে সড়কে পানি জমে থাকার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে চরম দুর্ভোগ নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচল করতে হয়। বেশ কিছুদিন আগে যেসব স্থানে বেশি বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সেসব স্থানে নিজ উদ্যোগে ইট, সুরকি ও বালু ফেলে চলাচলের কিছুটা হলেও উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, শিগগিরই যেন রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক জানান, জিরাবো-বিশমাইল সড়কটির ‘মেইনটেন্যান্স’ বাবদ উপজেলা থেকে ইমার্জেন্সি চিঠি এসেছে। আমরা দুই-এক দিনের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারে হাত দেবো। পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থার দিকে স্থানীয়দের নজর রাখার অনুরোধ জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement