২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেতন-বোনাস দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ অবরোধ

ঈদে ১০ দিনের ছুটি ও দূরপাল্লার পরিবহন চালুর দাবি
-

আসন্ন ঈদে ১০ দিনের ছুটি ও বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এ সময় তারা ঈদের আগেই বেতন- বোনাস পরিশোধ ও বাড়ি ফিরতে গণপরিবহন চালুর দাবি জানান। গতকাল শনিবার সকাল থেকে ভাসানটেক কাফরুল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় একত্র হয়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এর আগে একই দাবি আদায়ে সকালে মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় আন্দোলন শুরু করেন তারা। শ্রমিকরা বলছেন, ঈদের আর মাত্র বাকি পাঁচ দিন। এখনো তারা বেতন-বোনাস পাননি। আর বেতন-বোনাস এক বা দু’দিন আগে দিলে ঈদের কেনাকাটাও সম্ভব হবে না তাদের জন্য। এ দিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা মিরপুর ১০ নম্বর মোড় থেকে কাফরুল, মিরপুর-১, পল্লবী ও আগারগাঁও পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ থাকে। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের। বেলা ১টার দিকে বিজিএমইএ’র লোকজন ও পুলিশের সাথে রাস্তায় আলোচনা বসেন শ্রমিকরা। পরে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস পেয়ে দেড়টার দিকে রাস্তা ছাড়েন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এর পর থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে দ্রুত দাবি মানা না হলে আবারো রাস্তায় নামবেন বলে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন শ্রমিকরা।
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া একাধিক শ্রমিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৩০টিরও অধিক গার্মেন্টকর্মী এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান। তারা জানান, শুধু ঈদের ১০ দিনের ছুটি দিলেই চলবে না, সাথে দূরপাল্লার যানবাহনও চালু করতে হবে। লঞ্চ, ট্রেন ও বাস চালু না থাকলে তারা বাড়ি যেতে পারবে না। তাই ছুটির পাশাপাশি যানবাহন চালুরও দাবি জানান শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে আন্দোলনরত শ্রমিক আমজাদ হোসেন বলেন, বিজিএমইএ ভবনে আমাদের দাবির বিষয়ে মিটিং হবে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে। তাই আমাদের আন্দোলন আপাতত স্থগিত করছি। তবে ১০ দিনের ছুটির দাবি ও দূরপাল্লার যানবাহন চালু করার দাবি মানা না হলে আমরা আবারো রাস্তায় নামব।
গ্রিনবাংলা গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের আগে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করুক আমরা সেটি চাই না। আমরা তাদের দাবিদাওয়া বিষয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সাথে যোগাযোগ করেছি। শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে মালিক, শ্রমিক ও বিজিএমইএ’র সদস্যরা মিলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একটি স্থানের শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হলে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল না হয় সে কারণে শ্রমিকদের আন্দোলনের কথা শুনে আমরা ছুটে এসেছি। ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। আন্দোলনকারীরা বলেন, শ্রমিক ফেডারেশনের অনুরোধে আমরা আন্দোলন ছেড়ে কর্মস্থলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গার্মেন্টের মালিকরা বসে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া কিভাবে বাস্তবায়ন করবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সে কারণে আমরা আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শ্রমিকরা আরো বলেন, আজকের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীকাল (আজ রোববার) থেকে আবারো একযোগে রাজপথে নেমে আন্দোলন শুরু করবেন তারা।
মিরপুর মডেল থানার ওসি মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ ও পুলিশের আশ্বাসে শ্রমিকরা আপাতত রাস্তা ছেড়েছে। তাদের দুই দফা দাবির বিষয়ে বেলা আড়াইটার দিকে বিজিএমইএ ভবনে গার্মেন্ট মালিক, শ্রমিকরা ও বিজিএমইএ’র লোকজন মিটিংয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাসেই শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়েছেন। এখন মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে রাজধানীর ভাসানটেক ও কাফরুল এলাকার কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বেলা ১১টা থেকে মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে। এ সময় তারা দু’টি বাস ভাঙচুর করাসহ রাস্তায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তবে পুলিশ শুরু থেকেই বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement