২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা অর্থসহায়তার পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি

কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের অভিমত
-

কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবায়িত কর্মসূচিগুলোকে টেকসই করতে কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণ অতি জরুরি। তাছাড়া প্রাপ্ত অর্থের সদ্ব্যবহারের জন্য মাঠপর্যায়ে রোহিঙ্গা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে, এতে করে পরিচালন ব্যয় কমে এবং রোহিঙ্গারা অধিকতর পরিমাণ প্রত্যক্ষ সহায়তা পেতে পারে। রোহিঙ্গা সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) ২০২১ নিয়ে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) ২০২১ : প্রকৃত কার্যকর? নাকি শুধু নামেই কেবল পরিকল্পনা : ভবিষ্যতের চিন্তা করার এটিই সময় : স্থানীয়করণ এবং গণতান্ত্রিক মালিকানা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংস্থাটির কো-চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী এবং আবু মোর্শেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-২ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, কক্সবাজার জেলায় কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সরকারি কর্মসূচির সমন্বয়কারী মো: হেলালউদ্দীন আহমেদ। ওয়েবিনারে অতিথি হিসেবে যোগদান করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক, অ্যাভভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ আরো অনেকে।
ওয়েবিনারে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে কোস্ট ট্রাস্টের মো: মজিবুল হক মনির উল্লেখ করেন, ২০১৭ থেকে ২০২০ এর অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য গড়ে ৪২৮ ডলার অর্থসহায়তা এসেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রতিটি পরিবার খাদ্য এবং খাদ্য-বহির্ভূত ত্রাণ, আশ্রয়, বিভিন্ন উপকরণ ইত্যাদি সরাসরি সেবা ও ত্রাণ পেয়েছে ১৩০ ডলারের, অবশিষ্ট অর্থের কতটুকু অন্যান্য সেবা খাতে খরচ হয়েছে, কতটুকুইবা খরচ হয়েছে পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা খরচ হিসেবে- তার সুস্পষ্ট হিসাব স্বচ্ছতার সাথে প্রকাশ করা জরুরি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রভাব দীর্ঘ, তাই স্বল্প সময়ের জন্য নয়, রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ না হলে কোনো উদ্যোগই টেকসই হবে না।
সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, রোহিঙ্গা কর্মসূচির জন্য কোনটি প্রয়োজনীয় আর কোনটি বিলাসিতা সেটা চিহ্নিত করতে হবে, অপচয় রোধ করে অর্থের সদ্ব্যবহার করতে হবে।
সিনিয়র সচিব মো: হেলালউদ্দীন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সঙ্কটে পড়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, রোহিঙ্গা কর্মসূচিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সুসমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।
অ্যাভভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা যখন কক্সবাজারে আসে তখন স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় এনজিওগুলো নিজেদের উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমগুলো স্থানীয় এনজিওর নেতৃত্বেই হতে হবে। হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো কী পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছে, কোন খাতে তা খরচ করছে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা উচিত।
দুর্যোগ ফোরামের নঈম গওহর ওয়ারা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাদ্যপণ্য কক্সবাজার থেকেই সংগ্রহ করা উচিত। শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে কাজ করার জন্য যারা বিদেশ থেকে আসছেন, তাদেরকে স্থানীয়দের মধ্যে প্রযুক্তি ও দক্ষতা হস্তান্তর করতে হবে। অক্সফামের দেশীয় প্রধান দীপঙ্কর দত্ত বলেন, বাংলাদেশেই অন্যান্য অনেক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্থানীয়করণ নিশ্চিত করা গেছে, তাই রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনাতেও এটা সম্ভব। মাল্টিজার ইন্টারন্যাশনালের দেশীয় প্রধান রাজন ঘিমিরে বলেন, জেআরপি রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে পারে না, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যারিস্টার মনজুর মোরশেদ বলেন, লোকালাইজেশন রোডম্যাপ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে প্রায় এক বছর আগে, এটা প্রকাশ করা উচিত।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের জন্য মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ ব্যয় করার কথা ছিল, কিন্তু সেটার বাস্তবতা অনেক দূরে। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, জেআরপির অধীনে আসা অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, ২৫ শতাংশ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যবহার বরা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং দল গঠন করতে হবে।
ইপসার প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, স্থানীয়করণ কোনো দয়া দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়, এটা বরং আমাদের অধিকার। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তিমালাার আলোকে এই নৈতিক অধিকারটি স্বীকৃত। মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল দে সরকার বলেন, জেআরপি ২০২১ স্থানীয়করণ পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে আইএসিসিজ এবং জাতিসঙ্ঘকে অবশ্যই আইএএসসি নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
ওয়েবিনারে আরো বক্তৃতা করেন, রাশেদা বেগম, সদস্য, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ, মোজাফফর আহমেদ, প্যানেল চেয়ারম্যান, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ, আবু তাহের সভাপতি এবং মুজিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার প্রেস ক্লাব এবং মো: মিজানুর রহমান, চেয়ারম্যান প্রত্যাশা ইয়ুথ ক্লাব/সোশ্যাল মিডিয়াকর্মী, এ কে এম জসিম উদ্দিন (এডাব), রফিকুল ইসলাম (এফএনবি), এইচ এম নজরুল ইসলাম (বাপা কক্সবাজার), এসএম আনোয়ার হোসেন (উখিয়া প্রেস ক্লাব)। বিজ্ঞপ্তি।


আরো সংবাদ



premium cement