২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হাওর ভাতা পাচ্ছেন না ১৬ উপজেলার সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী

দ্বৈতনীতিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন বঞ্চিতরা
-

সরকারের নির্দেশনা থাকলেও নির্ধারিত অঙ্কের হাওর ভাতা পাচ্ছেন না দেশের চর, হাওর ও দ্বীপ অঞ্চলে কর্মরত সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অবকাঠামো ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া এসব অঞ্চলের যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার অপ্রতুলতার কথা বিবেচনা করে ২০১৯ সালে দ্বীপ, হাওর বা চরকেন্দ্রিক ১৬টি উপজেলায় সরকারি চাকরিজীবীদের আলাদা ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য সেক্টরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এই হাওর ভাতা নিয়মিত পাচ্ছেন। ব্যতিক্রম শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারা। সরকারের এই দৈতনীতির কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন হাওর ভাতাবঞ্চিত কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের ১৬টি উপজেলার চর হাওর এবং দ্বীপ অঞ্চলের সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ পদের গ্রেড অনুসারে মাসিক হাওর ভাতার হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই হাওর ভাতা দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল চর হাওরের সুযোগ-সুবিধায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা এসব উপজেলায় পদায়ন করলেও যোগদানে গড়িমসি করেন বেশির ভাগ সরকারি কর্মকর্তা। যোগদান করলেও সেখান থেকে বদলির জন্য নানা উপায়ে তদবির করেন। এমন বাস্তবতায় সরকার আলাদা ভাতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়। সরকারি বেতন কাঠামোর আলোকে ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়। ফলে অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এ ভাতা পাওয়ার কথা।
চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে রাষ্ট্রীয় মালিকানার একটি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন ফরিদুল আলম (ছদ্মনাম)। তিনি মোবাইলে নয়া দিগন্তকে জানান, আমি যেখানে কর্মরত আছি এখানে সরকারি অন্যান্য সব কর্মকর্তাই হাওর ভাতা নিয়মিত পাচ্ছেন। একমাত্র ব্যাংকের কর্মকর্তারাই এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের কাছে লিখিত আকারে জানিয়ে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হাওর ভাতাবঞ্চিত ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কমে আসছে কাজের স্পৃহা ও আগ্রহ। অনেকে অন্যত্র বদলি হওয়ার জন্যও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই ব্যাংক কর্মকর্তার মতে যেকোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যেই যদি হতাশা চলে আসে তাহলে এটা হবে গোটা অর্থনীতির জন্যই হুমকিস্বরূপ। তাই সরকারকে বিষয়টি নিয়ে এখনই সুরাহা করা জরুরি। দেশের আরেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়াতে দুই বছর ধরে একটি ব্যাংকে চাকরি করছেন শেখ আমিনুল ইসলাম। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, প্রত্যেকটি চর হাওর এবং দ্বীপ এলাকায় যারা সরকারি চাকরি করছেন তারা এই হাওর ভাতা পা্েচ্ছন। একমাত্র ব্যাংক কর্মকর্তারাই বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরো জানান, সেখানে সরকারের সব দফতরের কর্মচারীরা দ্বীপভাতা পাচ্ছেন। বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকও এ ভাতা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো দিচ্ছে না। যদিও প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অন্য যেকোনো এলাকার তুলনায় এখানে যাতায়াত ভাড়া এবং দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি। ভাতা কার্যকর না হওয়ার বিষয়টি হতাশাজনক।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কি না তা জানতে গতকাল যোগাযোগ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের সাথে। নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, চর হাওর এবং দ্বীপ অঞ্চলের ব্যাংকগুলোতে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের জন্য প্রত্যেক ব্যাংকই আলাদা একটি বাড়তি সুযোগ দিয়ে থাকে। টাকার অঙ্কে কিংবা হাওর ভাতা হিসেবে এটাকে বুঝানো না হলেও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তারা বাড়তি সুযোগ পেয়ে থাকেন। এই নিয়মটি সব ব্যাংকই অনুসরণ করছে।
উল্লেখ্য সরকার ঘোষিত হাওর, দ্বীপ ও চর উপজেলাগুলো হলোÑ কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া, সিরাজগঞ্জের চৌহালী, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজিবপুর, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, ভোলার মনপুরা, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, শাল্লা ও দোয়ারাবাজার; হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুরী।

 


আরো সংবাদ



premium cement