২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আইনে থাকলেও কর্মস্থলে নেই স্মোক জোন, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

-

আগারগাঁওয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ইমরান হোসেন। তিনি নিজে অধূমপায়ী, তবুও ধূমপানের বিড়ম্বনায় নিত্যদিনই পড়তে হয়। তার কর্মক্ষেত্রে নেই ধূমপানের কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা ‘স্মোকিং জোন’। ইমরানের ধূমপায়ী সহকর্মীরা কার্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে-বসে ধূমপান করে। ফলে ইমরানের মত অধূমপায়ীদের হতে হয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। ইমরান জানান, অফিসে স্মোকিং জোন (ধূমপান এলাকা) না থাকায় জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের কেউ কেউ হুটহাট তার কক্ষে চলে যান ধূমপান করতে। সিনিয়র অফিসার তাই মুখফুটে নাও বলতে পারেন না। অনেকে আবার জরুরি নির্গমন সিঁড়িতে গিয়ে ধূমপান করেন। এতে অগ্নিকাণ্ড বা অন্য দুর্ঘটনার সময় ঝুঁকি আরো বেড়ে যায় বলে জানান ইমরান।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি অফিস পর্যবেক্ষণ করে প্রত্যক্ষ ধূমপানের এই চিত্র চোখে পড়ে। ফুটপাথে, পার্কে, মার্কেটের সামনে, যেখানে জনসমাগম; সেখানেই দেখা গেছে কেউ না কেউ ধূমপান করছে। অফিসগুলোর প্রবেশমুখে, সিঁড়ির গোড়ায় পড়ে থাকতে দেখা যায় সিগারেটের টুকরা। এতে করে ধূমপায়ীর স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন অধূমপায়ীরা। এর মধ্যে রয়েছে অনেক শিশুসহ গর্ভবতী নারীও।
২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ সাময়িকীতে ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার : ঢাকা, বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকায় প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে ৯টি শিশু জনপরিসরে (পাবলিক প্লেস) তথা দোকানে, রাস্তায় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়েছে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, যেকোনো সাধারণ মানুষের চেয়ে একজন পরোক্ষ ধূমপায়ীর ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। এ ছাড়া হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে ২৩ শতাংশ বেশি। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই পরোক্ষ ধূমপান অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে কম ওজনসহ নানা রকম প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয় শিশু।
পরোক্ষ ধূমপানের এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশে আছে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’। আইন অনুসারেÑ জনপরিসরে বা উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ। কেউ এমন স্থানে ধূমপান করলে অনধিক ৩০০ টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাকে দ্বিগুণ হারে জরিমানা করা হবে।
ধূমপানমুক্ত এলাকার বাইরে ধূমপান এলাকাও নির্দিষ্ট করার বিধান আইনে রয়েছে। এ জন্য কিছু শর্তও দেয়া হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, কোনো পাবলিক প্লেসের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক এবং কোনো পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক তার এলাকায় ধূমপানের জন্য স্থান চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। এ ছাড়াও ধূমপান এলাকায় ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ এবং ‘ধূমপানে মৃত্যু ঘটায়’ লেখা নোটিশ থাকতে হবে। তবে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই এই আইন এখনো মানছে না। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বর্তমানে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাসরিন আক্তার জানান, গত প্রায় এক দশক ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তিনি। কাজ করেছেন দু’টি বেসরকারি সংস্থা ও দু’টি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানেও। কিন্তু কোথাও এই বিধিমালার কোনো প্রয়োগ দেখেননি তিনি। কোথাও স্মোকিং জোনের ব্যবস্থা রাখেনি কর্তৃপক্ষ।
নাসরিন বলেন, শুধু অফিস এলাকায় না, হাঁটার সময় বা রাস্তায় বাসের জন্য দাঁড়ালেও অনেক সময় সিগারেটের ধোঁয়া খেতে হয়! ক্ষতি হলেও করার কিছু থাকে না আমাদের। চিকিৎসকেরা জানান, পরোক্ষ ধূমপান শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির অন্যতম প্রধান কারণ। এ বিপদ থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন ধূমপায়ীর সাথে কথা বলে দেখা যায়, এটাকে গুরুতর কোনো অপরাধ নয় বলে মনে করছেন তারা। অন্য দিকে কর্মস্থলে নির্দিষ্ট ধূমপানের জায়গা না থাকায় যত্রতত্র ধূমপান করেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি, প্রত্যক্ষ ধূমপানের সমানই। তাই বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেÑ তা পূরণে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকেও আমলে নেয়া উচিত। আর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ধূমপান এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হলে, প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ হবে। পাশাপাশি যত্রতত্র ধূমপান করতে না পারায় ধূমপানের হার কমবে বলেও মনে করছেন তারা। তাই অধূমপায়ীদের ধূমপানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এই আইনের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী যুগ্মসচিব মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement