এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ
বেসরকারি ১২ কেজি ৯৭৫ ও সরকারি সাড়ে ১২ কেজি ৫৯১ টাকা- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
দেশে প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে খুচরাপর্যায়ে বেসরকারি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৯৭৫ টাকা (১২কেজি) করা হয়েছে। আর সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯১ টাকা। এই দাম গতকাল সোমবার থেকেই কার্যকর হবে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। এ ঘোষণা গ্রাহক বান্ধব নয় বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, প্রান্তিকপর্যায়ে সরকারি এলপি গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করা, বিদ্যুতের মধ্যে গরিব শ্রেণীর গ্রাহকদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করাসহ গ্রাহকবান্ধব কোনো প্রস্তাবই বিইআরসির আদেশে আনা হয়নি। এর পরেও এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হয়েছে এ জন্য তিনি বিইআরসিকে সাধুবাদ জানান।
বিইআরসির আদেশে বলা হয়, বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজির দাম প্রতি কেজি ৭৬ টাকা ১২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯৭৫ টাকা (মুসকসহ) নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯১ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম ৪৭ দশমিক ৯২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই দাম কার্যকরের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল জলিল বলেন, ‘সবাই এই দাম কার্যকর করতে বাধ্য। যদি কেউ দাম না মানে, তবে তার বিরুদ্ধে কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া এখন ভোক্তারা অনেক সচেতন। তারাও নির্ধারিত দামের বাইরে কিনবে না বলে আশা করছি।’
এদিকে গত এক বছরে হাজারো সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকালও সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চট্টগ্রামে তিনজন আহত হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে এই মানহীন সিলিন্ডারগুলোর বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানের বিষয়ে যদি কোনো ভোক্তা কমিশনের কাছে অভিযোগ করে, তাহলে বিইআরসির আইন এবং প্রবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণে বিস্ফোরক পরিদফতর ছাড়াও আরো কিছু সংস্থা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছে। এরা প্ল্যান্ট স্থাপনসহ সব বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। এরপরে যদি মান খারাপ হয়ে থাকে অথবা বাজারে যদি এ ধরনের মানহীন সিলিন্ডার থেকে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি। আর আমরা কমিশনের আইনের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব ততটুকু করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের লোকবলের সমস্যা আছে। এটার একটাই অফিস। জেলা বা বিভাগীয়পর্যায়ে অফিস নেই। মনিটরিং ব্যাপারটি আসলেই একটু কঠিন। সুতরাং ভোক্তাদের অভিযোগের মাধ্যমেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। রিটেইলার এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের তালিকা আমরা চেয়েছি। কেউ যদি অনিয়ম করে তাহলে এই তালিকা ধরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আমাদের আছে।’
প্রসঙ্গত ১৯৭৮ সালে সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড বোতলজাত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি বাজারজাত শুরু করে। ১৯৯৬ সালে এই ব্যবসায় যুক্ত হয় বেসরকারি উদ্যোক্তারা। ২০০৯ সাল থেকে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে এলপি গ্যাসের চাহিদা হুহু করে বাড়তে থাকে। সেই সাথে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে মূল্য। জানা গেছে, দর নির্ধারণের বিষয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হলেও জ্বালানি বিভাগ, বিইআরসি নাকি বিপিসি এই দায়িত্ব পালন করবে সে নিয়ে ছিল রশি টানাটানি। সর্বশেষ ক্যাবের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এলপিজির দর নির্ধারণ করার জন্য বিইআরসিকে শোকজ করে। সে মোতাবেক দর চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৪ জানুয়ারি গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি।