১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১১৪ বিঘা জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড

-

পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রায় ৩৮ একর (১১৪ বিঘা) জমি অবৈধ দখলদারদের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে এমন তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য ১১১ দশমিক ২৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এই হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজের জমিদার বাড়িতে ৬০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। শীতলাই হাউজে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সেবা দেয়ার পর তা পাবনা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে একসময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদীর তীরে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়। নতুন ভবনে হাসপাতালটি পরে ২০০ থেকে ৪০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০০৩ সালে মেন্টাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আওতায় আরো ১০০ বেড় বাড়িয়ে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে ১৫০টি পেয়িং ও ৩৫০টি নন-পেয়িং মিলে ৫০০টি শয্যা রয়েছে। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন তৎকালীন প্রথিতযশা সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ হোসেন গাঙ্গুলী।
বিশেষায়িত এই মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানের অন্যতম হাসপাতাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেজন্য ইতোমধ্যে যাবতীয় রূপরেখা দ্রুত প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং কিছু নির্দেশনা দিয়ে যান। নির্দেশনার অন্যতম হলো পাবনা মানসিক হাসপাতালের বেহাত হওয়া প্রায় ১১৪ বিঘা জায়গা উদ্ধার করা। জায়গা উদ্ধারের নির্দেশনা দেয়া হলেও এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। দায়িত্বশীলদের উদাসীনতার কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা করছেন পাবনাবাসী। এ জন্য জমি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
হাসপাতালের জমির আগে খাজনা দেয়া হতো। এর মধ্যে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে দেয়া হয়েছে ৩০ একর। বর্তমানে পাবনা মানসিক হাসপাতাল খাজনা দিচ্ছে ৭৪ একর জমির। রহস্যজনকভাবে অবশিষ্ট ৩৮ দশমিক ২৫ একর জমি পাওয়া যাচ্ছে না।
হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিস্ট মো: মকবুল হোসেন (পাশা) জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক মিটিংয়ে জানান হাসপাতালের ২৯ একর জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার আবেদনে জেলা প্রশাসন জমির অবস্থান জানানোর জন্য এসি ল্যান্ডকে দায়িত্ব দিয়েছে।
ডাক্তার মকবুল হোসেন আরো জানান, ১৯৫৭ সালের অগার্নোগ্রাম পরিবর্তন করে পদোন্নতিযোগ্য পদ সৃষ্টি করতে হবে। কোর্স চালু, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ, কমপক্ষে তিন বছর চাকরি আছে এমন পরিচালক নিয়োগ, ব্লক পোস্ট তুলে দেয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান প্রয়োজন।
বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও এক্যুমেন আর্কিটেক্টস অ্যান্ড প্লানারসের পরিচালক আবু রায়হান রুবেল জানান-‘আমার জানামতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় পাবনা মানসিক হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাকেন্দ্র হবে। এটা নিয়ে সময় ক্ষেপণ ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।’
আধুনিক হাসপাতাল হওয়ার পর এখানে আধুনিক মানের ওয়ার্ড, রোগী পুনর্বাসন সেন্টার, বৃত্তিমূলক সেন্টার, মিউজিক্যাল থেরাপি, চিত্রাঙ্কন সেন্টার, হাফওয়ে হাউজ, চাইল্ড সাইকিয়াট্রি, অর্টিজম সেন্টার, সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগ, অ্যামুজমেন্ট সেন্টার, গার্ডেনিং, সুইমিং, ক্যাটল ফার্মিং, সাইকিয়াট্রিক ট্রেনিং সেন্টার, আধুনিক প্যাথলজি বিভাগ, অর্গানোগ্রাম, লন্ড্রি প্ল্যান্ট, আধুনিক স্টোর ভবন, আধুনিক প্রশাসনিক ভবন, বহির্বিভাগ, যানবাহন সুযোগ-সুবিধা, আধুনিক ডরমেটরি, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সেন্টার, সাইকিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির জন্য এমফিল, এফসিপিএস, এমডি ইত্যাদি কোর্স চালু, প্লে গ্রাউন্ড এবং ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকতে পারে।
পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা মিতা জানানÑ আগেও কাজ করেছি। মানসিক হাসপাতালের জমি পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রের্কড হয়েছে। রেকর্ড পরিবর্তন করতে হবে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার আসাদুজ্জামান বলেন, জমির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে সমন্বিত প্রচেষ্টায় জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হবে।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার জানান, আমরা সাধারণত অবকাঠামো সংক্রান্ত কাজ করি। মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের হবে সেটা আমরা শুনেছি। তবে জমি নিয়ে সমস্যা আছে সেটা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক, জেলা প্রশাসন, গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হেমায়েতপুর এলাকার প্রবীণ শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, জমি কম হওয়ায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধের অভাবে বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সচেতন মহল শঙ্কিত।
এ ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন- পাবনা মানসিক হাসপাতালের জমি উদ্ধারের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। জমি অন্যান্য মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে আছে সেটা আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সব ধরনের সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement