২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

লকডাউনে ভার্চুয়াল আদালত বৃদ্ধির দাবি

হাইকোর্টে ৩৫টি বেঞ্চ চান আইনজীবীরা
-

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্ট বিভাগে এখন ভার্চুয়ালি চারটি বেঞ্চ (তিনটি দ্বৈত ও একটি একক) এবং সপ্তাহে দু’দিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে লকডাউনের মধ্যে ৩৫টি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ চালুর দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তাদের মতে আদালতের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য আইনজীবীরা যতক্ষণ লকডাউন থাকে সুপ্রিম কোর্টে ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ গঠনের দাবি জানান। আর লকডাউন না থাকলে আগের মতো রেগুলার কোর্ট ও ভার্চুয়াল কোর্ট চান তারা। এ ছাড়া দেশের সকল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আত্মসমর্পণ শুনানি, হাজতি আসামির জামিন শুনানি, নিউ ফাইলিংয়ের ব্যবস্থা করা, দেওয়ানি আদালতে নিউ ফাইলিং ও ইনজাংশন শুনানির ব্যবস্থা করাসহ জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালত, ট্রাইব্যুনালগুলোতে সকল প্রকার জামিন শুনানির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানয়েছেন। এ দাবিতে আগামীকাল ১১ এপ্রিল রোববার বেলা ১টায় সুপ্রিম কোর্টে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন আইনজীবীরা।
সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী এ মানববন্ধনের ডাক দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী আছেন প্রায় ১০ হাজার। প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মামলা হচ্ছে। এই হাজার হাজার মামলা হাইকোর্টের মাত্র চারটি বেঞ্চে করা সম্ভব নয়। চারটি বেঞ্চে সর্বোচ্চ দেড় শ’ মামলা হতে পারে। আমরা মনে করি এ অবস্থায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ন্যায়বিচার, সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনি সহায়তা দিতে পারছেন না আইনজীবীরা। যেখানে হাইকোর্টে ৫০টির বেশি বেঞ্চ ছিল সেখানে চারটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, করোনায় ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ চালু রাখার সক্ষমতা আছে সুপ্রিম কোর্টের।
এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, লকডাউনের মধ্যে ভার্চুয়াল আদালতের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। আর্জেন্ট বিষয়, জামিন ও রিটের মামলার জন্য রিট বেঞ্চ ও ক্রিমিনাল ভার্চুয়াল বেঞ্চে বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, লকডাউনে আইনজীবীরা অনেক সমস্যায় আছে। আইনজীবীদের জন্য প্রণোদোনার ব্যবস্থা করা উচিত। আর বিশেষজ্ঞরা যদি মনে করেন, করোনার বিস্তার রোধে লকডাউন দিতে হবে। তাহলে তা করা যেতে পারে। তবে লকডাউন, লকডাউনের মতো হতে হবে। আর লকডাউনে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য প্রণোদোনার ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্য দিকে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে চলমান লকডাউনের মাঝেও দেশের অধস্তন আদালতগুলো খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে চিঠি দিয়েছেন আইনজীবী নেতারা। বুধবার সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে সভাপতি অ্যাডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান প্রধান বিচারপতির বরাবর এ চিঠি পাঠান।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির চিঠিতে প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চলমান লকডাউনের সময় বিচারপ্রার্থী জনগণ ও আইনজীবীদের স্বার্থে নিম্ন (অধস্তন) আদালতে মামলা মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য কিছু লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। সর্বোপরি লকডাউনের মেয়াদ বর্ধিত না করেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে আবশ্যকীয় পদক্ষেপগুলো মেনে কোর্ট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ/নির্দেশ প্রদান করার জন্য সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি সবিনয়ে প্রার্থনা করছে।
অন্য দিকে গত ৬ এপ্রিল করোনাকালীন লকডাউনের মধ্যে কোর্ট খুলে দিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির চিঠিতে বলা হয়, ‘উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি বিষয়গুলো নিষ্পত্তিকরণার্থে সীমিত আকারে নিম্ন আদালতগুলোতে জামিন শুনানি, জরুরি নিষেধাজ্ঞার আবেদন ও ফাইলিং কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও আদালত অঙ্গনে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে ভিড় এড়াতে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
করোনা সংক্রমণ সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশে জনসাধারণের চলাচলের ওপর এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। গত ৪ এপ্রিল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতায় লকডাউন চলাকালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ভার্চুয়ালি চারটি বেঞ্চ (তিনটি দ্বৈত ও একটি একক) এবং সপ্তাহে দু’দিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারিক কার্যক্রম চলবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। পাশাপাশি দেশের অধঃস্তন আদালতগুলোর মধ্যে জেলা ও মহানগর-প্রতি একজন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে জরুরি বিষয়ে বিচারকার্য পরিচালিত হবে বলেও কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement