২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজশাহীর হেলে পড়া প্রজাপতি সড়কবাতি

রাজশাহী নগরীর প্রজাপতি বাতি নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদাররা : নয়া দিগন্ত -

উদ্বোধনের মাত্র দেড় মাসের মাথায় সামান্য ধূলি ঝড়ে উপড়ে ও হেলে পড়া রাজশাহীর সেই নান্দনিক ‘প্রজাপতি সড়কবাতি’গুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদারের লোকজন। ফলে মহানগরীর বিলশিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কটির বিভাজন আবার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। গত বুধবার থেকে সড়কবাতির খুঁটিগুলো খোলার কাজ শুরু হয়েছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সড়কবাতিগুলোর উদ্বোধন করেছিলেন। এর দেড় মাসের মাথায় ৪ এপ্রিল মৌসুমের প্রথম মাত্র ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড়ে অন্তত ৮৬টি সড়কবাতির খুঁটি হেলে ও উপড়ে পড়ে। এর মধ্যে অন্তত ৪০টি সড়ক বিভাজনের ভেতরে পড়ে যায়। কোনো কোনোটি আছড়ে পড়ে সড়কে। সড়কটিতে মোট ১৭৪টি খুঁটি বসানো হয়েছিল। প্রতিটিতে ছিল দু’টি করে এলইডি বাতি। রাসিকের এই সড়কবাতি বসানোর কাজটি পেয়েছিল ‘হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, কংক্রিটের যে স্তম্ভের ওপর খুঁটিগুলো বসানো হয়েছিল সেটি শিডিউল অনুযায়ী হয়নি। আকারে ছোট সেই স্তম্ভটি সামান্য একটুই মাটিতে পুঁতেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বেলে মাটির ওপর স্তম্ভটি কম করে পোঁতার কারণে ঝড়ে সেটি গোড়া থেকেই উপড়ে যায়। এর পরদিন ৫ এপ্রিল সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সরেজমিনে খুঁটিগুলো পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি খুঁটিগুলো তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর কংক্রিটের স্তম্ভটি বেশি করে পোঁতার পর তার ওপরে আবার খুঁটিগুলো স্থাপনের নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে খুঁটিগুলো কংক্রিটের কাঠামো থেকে খুলে ফেলার কাজ শুরু হয়। গতকাল শুক্রবারের মধ্যেই সব খুঁটি খুলে নেয়ার কথা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় দু’টি ক্রেনের সাহায্যে খুঁটিগুলো খুলে ফেলছিলেন শ্রমিকেরা। তারা জানান, সড়কবাতির খুঁটিগুলো খুলে নগরীর সিটিহাট এলাকার এক গুদামে রাখা হচ্ছে। সব খুঁটি সরিয়ে নেয়ার পর কংক্রিটের কাঠামোটি তোলা হবে। তারপর সেটি আরো একটু বেশি করে মাটির নিচে পোতা হবে। পরে সড়কবাতির খুঁটিগুলো এনে কংক্রিটের কাঠামোর ওপর আবার স্থাপন করা হবে।
সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, এই কাজের শর্ত অনুযায়ী- এক বছরের মধ্যে কোনো ক্ষতি হলে তা নিজ খরচে ঠিক করে দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেহেতু ত্রুটি থাকার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই আবার সবকিছু নতুন করে বসাতে বলা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে চার লেন সড়কটির আইল্যান্ডে চীন থেকে আনা সড়কবাতির ১৭৪টি খুঁটি স্থাপন করা হয়। প্রতিটি খুঁটির সাথে প্রজাপতির মতো ডানায় দু’টি করে এলইডি বাতি বসানো হয়। রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক) রেয়াজাত হোসেন রিটু এর আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সড়কবাতির খুঁটিগুলো একটি কংক্রিটের স্তম্ভের ওপর বসানো হয়েছিল। স্তম্ভটি পাঁচ ফুট উচ্চতার। এর মধ্যে সাড়ে তিন ফুট মাটির নিচে আছে। আর দেড় ফুট আছে মাটির ওপরে।
তবে হেলে পড়ার পরদিন ৫ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কংক্রিটের স্তম্ভগুলো কোনোক্রমেই পাঁচ ফুট হবে না। এগুলোর উচ্চতা সর্বোচ্চ তিন ফুট। এর অর্ধেক অংশ মাটির নিচে, বাকিটা ওপরে। মাটির নিচে কম থাকার কারণেই মাত্র ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগের ধূলিঝড়ে খুঁটিগুলো উপড়ে পড়ে। অবশ্য খুঁটিগুলো ভালো করে না পোতার বিষয়ে সমালোচনা হয়েছিল আগেই।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল হুদা টিটো সাংবাদিকদের জানান, কংক্রিটের কাঠামোটি বেশি করে পুঁতে দিলে সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন নিচের অংশটি আইল্যান্ডে ঢাকা পড়ছিল। ওপরের প্রজাপতির মতো অংশটিও নিচু হয়ে যাচ্ছিল। সে কারণে কংক্রিটের কাঠামোটি কম করে পোতা হয়েছিল। এখন মেয়র আবার নতুন করে কাঠামোটি তুলে আরো বেশি করে মাটির নিচে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
সূত্র জানায়, হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন এর আগে (২০১৯ সালে) রাসিকের ১৬টি ফ্লাড লাইট বসানোর কাজ করেছে। ৯ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৭ টাকা ব্যয়ে নগরীর ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্লাড লাইটগুলো বসানো হয়। এই কাজেই ছয় কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। এরই মধ্যে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকার ‘প্রজাপতি সড়কবাতি’ বসানোর কাজ পায় এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজশাহীতে। তবে স্থাপনের দেড় মাস পরই নতুন সড়কবাতির খুঁটিগুলো উপড়ে পড়ায় এই কাজে কোরনা দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।


আরো সংবাদ



premium cement