করোনাকালে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরী খাদ্য ও হস্তশিল্পের জমজমাট অনলাইন ব্যবসা
- এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
- ১০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা বাণিজ্যে যেখানে মন্দা, অস্তিত্ব সঙ্কট এই সময়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন ব্যবসা। এই সেক্টরে সম্পৃক্ত হয়ে নারীরা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছেন নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক মেসেঞ্জার কিংবা মোবাইল ফোনে কল করলেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে পছন্দের সামগ্রী।
এতে নারী উদ্যোক্তারা এক দিকে যেমন পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা এনেছেন অন্য দিকে ক্রেতারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়িয়ে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন। এই ডিজিটাল মার্কেটে অ্যাপস-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং, হোম মেইড ফুড, বুটিকস, নারীদের বিভিন্ন ধরনের কাপড়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। শুধু নারী নয়, করোনাকালে আনলাইন ব্যবসায় এগিয়ে গেছেন অনেক তরুণ উদোক্তা।
আবার দোকান, শো-রুম নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন তারাও তাদের পণ্যের প্রচার বেচা কেনায় যুক্ত হয়েছেন এই অনলাইন মার্কেটে। করোনার কারণে থমকে যাওয়া এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বেচাকেনায়ও গতি এনেছে পণ্য বেচাকেনার এই ডিজিটাল প্লাটফর্ম।
মিরসরাইয়ে অনলাইনে ক্রেতা এবং বিক্রেতার সমন্বয় ঘটিয়েছে মিরসরাই ই-কমার্স ফোরাম-মেফ। ফেসবুকভিত্তিক এই গ্রুপটিতে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের ছবি দিয়ে পোস্ট করছেন। সেখান থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য অর্ডার করছেন অনলাইনে। অর্ডার দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্রেতার বাড়িতে চলে যাচ্ছে সেই পণ্য। মিরসরাই ই-কমার্স ফোরমের (মেফ) এডমিন শরীফ মাহমুদ বলেন, যুগের চাহিদায় পণ্যের বেচাকেনায় ডিজিটাল প্লাটফর্ম ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মিরসরাইয়ের অনলাইন উদ্যোক্তা এবং গ্রাহকদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে মিরসরাই ই-কমার্স ফোরাম করা হয়েছে। উদ্যোক্তা তৈরি, ব্যবসার প্রসারে এই গ্রুপটি ভালো ভূমিকা রাখছে বলে আমি মনে করি। করোনাভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়ায় লকডাউনের মধ্যে বিপণিবিতান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভোক্তারা তাদের কাক্সিক্ষত পণ্য পাচ্ছে না। কিন্তু মেফের সাথে সংযুক্ত উদ্যোক্তারা অনলাইনের মাধ্যমে ভোক্তার সব চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
গত বছর করোনাকাল থেকে অনলাইনে আচার বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জান্নাতুল নাঈম চৌধুরী। এখন নাঈমার আচার খুব প্রসিদ্ধ।
জান্নাতুল নাঈম চৌধুরী জানান, আমি আগেও আচার সরবরাহ করতাম। তবে করোনাকাল থেকে অনলাইনে প্রচারের কারণে চাহিদা ও জনপ্রিয়তা ব্যাপক বেড়ে গেছে। মিরসরাই উপজেলার গণ্ডি ফেরিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আচারের অর্ডার পাচ্ছি সব সময়। আমরাও কাস্টমারদের চাহিদা ও পছন্দমতো মান ধরে রেখে সরবরাহ করে আসছি।
গৃহিণী নাজনীন আক্তার জানান, করোনার কারণে শিশুদের জন্য হোটেল রেস্টুরেন্টের তৈরি খাবার কিনতে শঙ্কিত তিনি। তাই ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়া ছবি দেখে অর্ডার করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পছন্দের খাবার পৌঁছে দেয়। এতে ফ্রেশ খাবার পাওয়ার পাশাপাশি করোনার ঝুঁকি এড়ানো যাচ্ছে। অন্য দিকে ড্রেস থেকে শুরু করে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও তিনি অনলাইনে ক্রয় করেন বলে জানান।
অনলাইন-ভিত্তিক হোম মেইড ফুড ড্রিম কেকসের এডমিন শবনম মুক্তা বলেন, করোনার এই ক্রান্তিকালে বেশির ভাগ ব্যবসা স্থবির। হোটেল রেস্টুরেন্টে গিয়ে পছন্দের খাবার কেনায় অনাগ্রহ। এই প্রেক্ষাপটে আমি হোম মেইড ফুড ব্যবসা শুরু করেছি। অনেক সাড়া পাচ্ছি। কোনো পণ্য শুরুতে গ্রাহক পর্যায়ে দেয়ার আগে আমরা নিজেরাই স্বাদ গুণগত মান পরীক্ষা করি। ফ্রেশ, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খাবার তৈরিসহ সব কিছুই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিশ্চিত করা হয়। নতুন নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে শবনম মুক্তা বলেন, যে কাজটি মন থেকে আসে সেটি নিয়েই ব্যবসা শুরু করা উচিত। কমিটমেন্ট এবং আগ্রহ থাকলে নতুন উদ্যোক্তারা অবশ্যই সফল হবে।
ড্রিম কেকের এডমিন শরফুদ্দিন রাজু বলেন, অনলাইন হোম মেইড ফুড ব্যবসার শুরুর পর ভেবেছিলাম ফেসবুক পেইজ বুস্টিং কিংবা লিফলেট দিয়ে প্রচারণা শুরু করব। এমনই সময়ে মিরসরাই ই-কমার্স ফোরামের সৃষ্টি। এই গ্রুপে পণ্য কেনার পর গ্রাহক রিভিউ পোস্ট দিচ্ছেন। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রসার হচ্ছে। মেফ গ্রুপটি আমাদের ব্যবসার প্রসারে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। খুব দ্রুত উদ্যোক্তাদের ব্যবসার ব্যাপ্তি বাড়ছে।
তানজুস অনলাইন শপিংয়ের উদ্যোক্তা তানজিনা তানজু বলেন, অনলাইন ব্যবসার প্রসারের কারনে নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার সুযোগ পেয়েছে। এটি নারীদের জন্য অনেক গৌরবের একটি বিষয়। মিরসরাইয়ের সব উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার এবং ক্রেতা-বিক্রেতা সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখছে মেফ।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, করোনার এই সময়ে পরিবারের অনেক উপার্জনক্ষম পুরুষ সদস্য কাজ হারিয়েছেন। অনেক পরিবার আর্থিক সমস্যায় নিমজ্জিত হয়েছে। এই বাস্তবতায় নারী সদস্যরা নিজ পরিবারে অবস্থান করেও অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করছেন। অনেক উদ্যোক্তার পরিবারে আর্থিক ভারসাম্য রক্ষায় অনলাইন ব্যবসা বড় ধরনের ভুমিকা রাখছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা