২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিটফোর্ড হাসপাতালে ফের করোনা আতঙ্ক : সেবার মান ঢিলেঢালা ষ

-

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ১৯ জন ডাক্তারসহ ৪০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে এক জন গতকাল কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান। তাই ফের করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে হাসপাতালে। এ কারণে অন্য রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ইমার্জেন্সি ও আউটডোর প্রায় ফাঁকা। নতুন ভবনের নিচতলায় মেডিসিন, গাইনি ও নাককান গলা বিভাগসহ নানান রোগের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। অথচ গতকাল রোগী ছিল না বললেই চলে। তারপরও সামান্য যে কয়জন রোগী এসেছেন তাদের রুমের ভেতর ঢুকতে দেয়া হয়নি। দূর থেকে রোগীর কথা শুনে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে লিখেছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপত্র। তবে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আউটডোর ডাক্তারের কাছ থেকে কোনো রোগী বের হলেই ব্যবস্থাপত্রটি নিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছেন তারা।
হাসপাতালের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত বছর থেকে এ যাবৎ বহু ডাক্তার, নার্স এবং স্টাফ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে তিন শতাধিক সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে তিনজন ডাক্তার, একজন নার্স এবং তিনজন স্টাফ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তা ছাড়া গত রাতে রেডিওলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান জিলিপি কুমার কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান। এর আগেও ওই বিভাগের টেকনিশিয়ান কৃষ্ণ নামে আরেক জনের মৃত্যু হয়। এ কারণে পুরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিভাগে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গতকাল সকালে বুকের ব্যথা নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে এসেছিলেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা রুবেল। তিনি বলেন, তাকে এক্সরে করতে বলেন ডাক্তার। পরে পুরান ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক্সরে রুমের সামনে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বলা হয় যে, এক্সরে মেশিন নষ্ট। এ দিকে, ইমার্জেন্সি ভবনের নিচতলায় আউটডোর অর্থোপেডিক্স বিভাগ। সেখানে রোগীদের জটলা দেখা গেছে। ভেতরে কোনো রোগী নেই। ডাক্তার নিরিবিলি বসে আছেন। অথচ বাইরে রোগীর ভিড়। পরে চার থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুর হাত ভাঙা নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন শানজিদা নামে এক নারী। তিনি বলেন, তার বাসা কদমতলী থানা এলাকায়। গত মাসে ফ্লোরে পড়ে তার শিশুসন্তানের হাত ভেঙে যায়। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই আবার এসেছি ডাক্তারের কাছে। তবে ডাক্তার তার রুমে ঢুকতে দিচ্ছে না বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ডাক্তাররা কাউকে পরোয়া করে না। তাই তারা রোগীদের রুমে ঢুকতে দিচ্ছেন না। আর কেউ কিছু বলছেনও না। প্রতিবাদ করলে শিক্ষানবিশ ডাক্তার দিয়ে মারধর ছাড়াও নানা ধরনের হুমকি দেয়া হয়ে থাকে। তাই হাসপাতালের কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। তা ছাড়া কিছু ডাক্তার সব সময় আউটডোর রোগীদের হয়রানি করছে। পরীক্ষার জন্য পাশের কিংবা দূরের কোনো ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিকে পাঠানো হয়। অথচ কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারে না।
মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো: রশীদ উনি নবী নয়া দিগন্তকে বলেন, মিটফোর্ড হাসপাতালে আসা রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার দেয়া হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে অনেক কম রোগী আসছে। আগে আউটডোরে প্রতিদিন চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে টিকিট কাটত। এখন কোভিড-১৯ আতঙ্কে অন্যান্য রোগী কমছে। গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ড মিলে ৬০৯ রোগী ভর্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এ গত এক বছরে ডাক্তার, নার্স এবং স্টাফসহ তিন শতাধিক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনজন ডাক্তার, একজন নার্সসহ সাতজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে রেডিওলজি বিভাগের এক টেকনিশিয়ানের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া ১৯ জন ডাক্তারসহ ৪০ জন আইসোলেশনে রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে আসা কোনো রোগীর সেবা দিতে কোনো ডাক্তার অবহেলা করেন না। এমনকি পরীক্ষার সব মেশিন সচল রয়েছে। তাই অবহেলার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement