২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রংপুরে আগুনে ভস্মীভূত জামান মার্কেট

-

ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রংপুর মহানগরীর নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পোশাক কেনাকাটার কেন্দ্রস্থল জামান মার্কেটের গোডাউন, কারখানাসহ অন্তত ৩০টি দোকান। এতে পথে বসেছে আড়াই শতাধিক দোকানি ও কর্মচারী। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা প্রাথমিক ক্ষতির দাবি করছেন দোকান মালিক সমিতি।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও দোকান মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর জামান মার্কেটের পেছনের দিকে জোবায়ের গার্মেন্ট ও ভাই ভাই গার্মেন্ট আগুনের সূত্রপাত হয় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে। খবর পেয়ে সেখানে ভোরেই উপস্থিত হয় ফায়ার সার্ভিস। পরেরংপুরের ৮টি এবং হারাগাছের ২টি ইউনিট এনে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হয়। স্থানীয় লোকজন, পুলিশের সহায়তায় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পোশাক কারখানা, গোডাউনসহ অন্তত ৩০টি দোকান। পুড়ে যাওয়া জোবায়ের গার্মেন্টের মালিক আব্দুল আউয়াল জানান, ঈদ উপলক্ষে ১০ দিন আগেও ১৯ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের তৈরী পোশাক এনে রেখেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও প্রায় ৭০ লাখ টাকারও বেশি মালামাল ছিল তার দোকানে। ভাই রনিসহ ব্যবসা করতেন তিনি। এখন সব আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি জানান, ঢাকার ব্যবসায়ীরা তার কাছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বকেয়া পাবেন। ব্যাংক লোন আছে ১৫ লাখ টাকা। এখন কী করবেন তারা। ঘটনার ভয়াবহতায় অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার ভাই রনিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিকে রনির বাবা লালমিয়া জানিয়েছেন, বাড়ির জমিজমা বিক্রি করে ব্যবসায় লাগিয়েছিলেন। সব শেষ। পথের ভিখেরি হলেন তারা।
হাসান গার্মেন্টের মালিক ওয়াদুদ বেপারী জানান, ৪০টি অটো সেলাই মেশিন দিয়ে এখানে ছিল তার কারখানা। ৫০ জন শ্রমিক কাজ করতেন সেখানে। এ ছাড়াও পোশাক তৈরির জন্য ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল তার দোকানে। কিন্তু এখন কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ভাই ভাই গার্মেন্টের মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমার ৩টি দোকান ও ২টি গোডাউনে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার তৈরি পোশাক ছিল। যা ঈদ উপলক্ষে আনা হয়েছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তাদের মতো অন্তত ৩০টি দোকানের সব কিছুই পুড়ে গেছে। সাধারণত মার্কেটটিতে কম এবং ন্যায্যমূল্যে পোশাক বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এসব দোকান ও গোডাউনে বিপুল পরিমাণ মালামাল মজুদ করেছিল দোকানিরা।
মার্কেটটির দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বেপারী জানান, প্রায় ৩০-৩৫টি গোডাউন, কারখানাসহ দোকান পুড়ে গেছে। সবাই ঈদ উপলক্ষে ঋণ করে মালামাল ক্রয় করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে অন্তত ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছি আমরা।
মার্কেটটির দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ ভোলা জানান, ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে আগুনে। এ ঘটনা পরিকল্পিত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফায়ারের পাশাপাশি আমরাও তদন্ত করছি। কেন কয়েকটি দোকানে পর পর আগুন লাগল?
রংপুর জেলা মোটরসাইকেল দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসেন আশরাফী জানান, এখানে মূলত নি¤œ ও মধ্য বিত্তরা কেনাকাটা করেন। কম ও ন্যায্যমূল্যে এখানে বেচাকেনা হয়। কোভিড-১৯ এর কারণে গত বছর বেচাবিক্রি হয়নি। এবার তারা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মালামাল মজুদ করেছিলেন। কিন্তু এখন কিছুই নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সরকারকে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি করেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, রংপুর বিভাগের উপপরিচালক ওহিদুল ইসলাম জানান, ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে খবর পেয়ে আমরা প্রথমে দু’টি টিম আসি। পরে আগুনের ভয়াবহতা দেখে রংপুরের ৬টি এবং হারাগাছের ২টি টিমকে নিয়ে আমরা অপারেশন চালাই। মোটামুটি ২ ঘণ্টার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৬টি দোকান পুরোপুরি এবং আরো ১০টি দোকান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement