২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নোংরা রাজনীতির শিকার : সামিয়া রহমান

-

বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগে শাস্তি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সামিয়া রহমান বলেন, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে আমার ভগ্নিপতি মারা যাচ্ছেন, এমন খবর পেয়ে শর্ট টাইমের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দিই। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ডিন অফিস থেকে আমার কাছে প্রথম ফোন দিয়ে বলা হয়, আপনি ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান যৌথভাবে যে লেখাটি জমা দিয়েছেন সেটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি শোনার পর আমি খুব অবাক হলাম। কারণ, আমি সাম্প্রতিক সময়ে ডিন অফিসে কোনো লেখা জমা দিইনি। তিনি বলেন, এরপরই আমার সাবেক ছাত্র মারজানকে ফোন দিয়ে জানতে চাই, কোন লেখার কথা বলছে ডিন অফিস। মারজান তখন বলে, ম্যাডাম আপনি যে আইডিয়া দিয়েছিলেন সেটি। তখনই জানতে পারলাম মারজান আমার আইডিয়ার লেখাটি সংশোধন, বিয়োজন করে নিজের ভাষায় লিখে রেফারেন্সসহ ডিন অফিসে জমা দিয়েছে এবং সেটি ডিন অফিস গ্রহণও করেছে। মারজান আর আমি ওই সময় দায়িত্ব ভাগাভাগি করে গবেষণার কাজগুলো করতাম।
সাংবাদিকতার এই শিক্ষক বলেন, আমি মারজানকে বারবার প্রশ্ন করেছিলাম, লেখার বিশ্লেষণ ঠিকমতো করেছ কি না, রেফারেন্স ঠিকমতো দিয়েছ কি না। সে দায়িত্ব নিয়ে বলেছে, ম্যাডাম আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন, সব ঠিকভাবে হয়েছে। আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আমাকে না দেখিয়ে সে ডিন অফিসে লেখাটি কেন জমা দিয়েছে। আর রিভিউয়ারের কপি আমাকে পাঠাল না কেন? সে শুধু আমাকে ‘স্যরি’ বলেছে।
সামিয়া রহমান আরো জানান, লেখাটি ছাপা হয়েছে এটা প্রথম জানতে পারি ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডিন ফরিদউদ্দীন স্যার আমাকে ফোনে জানান, তোমার যে লেখাটি ছাপা হয়েছে, এ লেখায় তুমি প্লেজারিজম (চৌর্যবৃত্তি) করেছ, এমন অভিযোগ করেছেন তোমার বিভাগের দু’জন শিক্ষক। তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি, আমার দায়িত্ব ছিল কী লেখা হচ্ছে বা কী যাচ্ছে, ওই বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া। কিন্তু মারজান যে ডিন অফিসে আমার অনুমোদন ছাড়া লেখাটি পাঠিয়ে দিয়েছে, বিষয়টি আমি জানতাম না। লেখা ছাপা হওয়ার পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যেহেতু আমি জড়িত ছিলাম না, তাই দেরি না করে সেটা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাই ডিন স্যারকে। আমি ওই সময় লেখা প্রত্যাহারের আবেদন করি, সেই স্বাক্ষরযুক্ত চিঠিও আছে আমার কাছে।
তিনি জানান, লেখাটি প্রত্যাহারের বিষয়ে তৎকালীন ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যারকে অবহিত করলে সাথে সাথে তিনি সিন্ডিকেটে বিষয়টি তুলতে বলেন। কিন্তু ড. ফরিদউদ্দীন বিষয়টি জিইয়ে রাখেন সময় ও সুযোগের জন্য। সাত মাস ধামাচাপা দিয়ে রাখার পর ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আরেফিন স্যার ভিসির চেয়ার থেকে সরে গেলে সাথে সাথে ওই ভুয়া চিঠিটি তৈরি করা হয় শিকাগো জার্নালের নামে, অ্যালেক্স মার্টিনের পরিচয় দিয়ে। যেখানে অ্যালেক্স মার্টিন বলে কারো অস্তিত্ব নেই এবং চিঠিটিও শিকাগো জার্নাল থেকে পাঠানো হয়নি। লেখাটি ছাপানোর প্রক্রিয়ায় ভুল ছিল দাবি করে তিনি বলেন, প্রক্রিয়াটি ভুল ছিল এ বিষয়টি ট্রাইব্যুনাল ও প্রাক্তন ভিসি বলেছেন। আমি দালিলিকভাবে প্রমাণ করতে পারব ছাপা হওয়ার প্রতিটি স্তরে কিভাবে ভুল হয়েছে। একজন একটি লেখা জমা দেয়ার পর তা রিভিউয়ারের কাছে যায়। তিনি কারেকশন (সংশোধনী) দিয়ে লেখককে পাঠান। সেটি সংশোধনের পর সম্পাদনা পরিষদ দেখে ক্লিয়ারেন্স দেয়ার পর সেই লেখা ছাপা হয়। কিন্তু এ লেখার অসঙ্গতিগুলো রিভিউয়ার, সম্পাদনা পরিষদ দেখেনি। গত ২৮ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের পদাবনতি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুককেও একই শাস্তি দেয়া হয়।
সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : আ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধের পাঁচ পৃষ্ঠা ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে হুবহু নকল করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement