২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অভিমত

নৈতিক অবক্ষয় রোধে পাঠ্যক্রমে ইসলাম শিক্ষার বিকল্প নেই

-

সমাজের প্রায় সর্বস্তরে এখন মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবক্ষয় বিদ্যমান। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়, বিশেষ করে পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার দুর্বলতাই এর মূল কারণ। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মূল উৎসই হলো ধর্ম এবং বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য ইসলাম। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের ইসলাম শিক্ষাকে শিক্ষার সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক রেখে পাঠ্যক্রম প্রণীত হয়েছে, এতে তাদের উন্নতির কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বাংলাদেশে কেন এর ব্যতিক্রম? এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার অবস্থান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনা জরুরি। সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে পাঠ্যক্রমে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংকট্যাঙ্ক- ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (আইআইআইটি) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থটের (বিআইআইটি) যৌথ আয়োজনে গত সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রমে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইটির নির্বাহী পরিচালক ড. এম আব্দুল আজিজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডক্টর শাহ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, ডিন ধর্মতত্ত্ব অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, প্রফেসর ড. আ ক ম আব্দুল কাদের, অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ ফরিদগঞ্জ মাজিদিয়া কামিল মাদরাসা ও যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন।
সম্মেলনে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা প্রদান করা হয়Ñ
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০’ এ ধর্ম শিক্ষাকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পঠন-পাঠনে এবং বিদ্যালয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের কথা উল্লেখ আছে (পৃ: ৯৭); কিন্তু পাবলিক (বোর্ড) পরীক্ষায় ‘ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষা’ বিষয়টি রাখা হয়নি। পাবলিক (বোর্ড) পরীক্ষায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রাখা না হলেÑ আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে তা অর্থহীন হয়ে পড়বে। তাই আগে মতো ‘ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষা’ বিষয়টি বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীকে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০-এ মাধ্যমিক স্তরে বলা হয়েছে। শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী এ স্তরে নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার কথা। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০ -এ ‘মূল্যবোধ ও নৈতিকতা’ বিষয়ে একটি নতুন শিখনক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একাদশ-দ্বাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও মানবিকসহ সব শাখা ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক-নৈর্বাচনিক বিষয় হিসেবে পঠন-পাঠন এবং বোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা দরকার।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত-মানব জীবনের ভিত্তিভূমি হলো শিশুকাল। এখানে যা কিছু শেখানো হবে, তাই আজীবন তাদের কোমল হৃদয়ে রেখাপাত করবে। তাই ‘শিশুর প্রথম পাঠ, প্রথম পড়া হতে হবে পরম প্রভু স্রষ্টার নামেÑ যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ এটা শিশুর জন্মগত অধিকার। শিশুর ধর্মীয়জ্ঞান মসজিদ, মন্দির, গির্জা প্যাগোডা- তথা উপাসনালয়ের মধ্যে সীমিত না রেখে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত গুরুত্বসহ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। এটা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্বও বটে।
শিক্ষার সর্বস্তরে আদর্শ জীবন হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ সা: ও খুলাফায়ে রাশেদীনের জীবনাদর্শ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য মহামানবদের জীবনাদর্শ পঠন-পাঠন বাধ্যতামূলক করা দরকার।
সম্মেলনে প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর ড. মো: শামছুল আলম, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ফজলে রাব্বী, সহকারী অধ্যাপক (ইসলাম শিক্ষা), রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা, ফরিদা ইয়াসমিন, সিনিয়র শিক্ষিকা (ইসলাম শিক্ষা), শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিআইআইটির কোঅর্ডিনেটর ড. ইবরাহীম খলিল আনোয়ারী। অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের গবেষক, শিক্ষকসহ প্রায় দুই শত লোক অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞপ্তি।

 


আরো সংবাদ



premium cement