২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঝুঁকিপূর্ণ ডেমরা-চনপাড়া ব্রিজ দিয়ে চলছে যানবাহন

-

অনেক দিন ধরেই ব্রিজটির দুর্বল অবস্থা। কেউ এটা মেরামত করে দেয় না। কিংবা নতুন বানানোরও কোনো উদ্যোগ নেয় না। ব্রিজটির রেলিং নিজে নিজেই খসে পড়ছে। ছোট একটি গাড়ি গেলেই কেঁপে ওঠে। মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পড়ল। নদী পথে চলাচলকারী বালু ও পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে। ব্রিজটির পিলারের পলেস্তার খসে রড বেরিয়ে গেছে। এত কিছুর পরও কেউ এটার খবর নেয় না। মনে হয় এ ব্রিজের কোনো অভিভাবক নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ক্ষতি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। কথাগুলো বলছিলেন ব্রিজের পাশেই বসবাসকারী শাহানা আক্তার রুমা।
মীরপাড়া এলাকার ছয় বছরের ছোট্ট শিশু আরাফ হোসেন বলল, ওই পাড়ে তার নানী বাড়ি। ভয়ে সে ওই বাড়িতে বেড়াতেও যায় না। যদি ব্রিজটা ভেঙে যায়! গাড়ি নদীতে পড়ে যায়! চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ডেমড়া-চনপাড়া ব্রিজ। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন যানবাহন চালক ও পথচারীরা। নির্ধারিত ৬০ বছর মেয়াদের মাত্র অর্ধেক পূরণ হয়েছে। এতেই নরবড়ে হয়ে গেছে ব্রিজটি।
ব্রিজটি দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ব্রিজটি এত ঝুঁকিপূর্ণ থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সাড়াভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টাঙিয়েই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়. ১৯৯১ সালে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বালু নদের উপর ডেমড়া-চনপাড়া এলাকায় এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এটির দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট, প্রস্থ ১২ ফুট। রাজধানী ঢাকার সাথে পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগের সুবিধার্থে বালু নদের উপর ডেমড়া-কালিগঞ্জ সড়কের চনপাড়া এলাকায় নির্মিত হয় এ ব্রিজটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে ৬০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে নির্মাণ করা হলেও ২৯ বছরেই সেতুটির ভঙ্গুর দশা।
জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে একবার সেতুটির নিচে ফাটল দেখা দেয়। ওই সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সে যাত্রায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ব্রিজটি। ২০১২ সালে ব্রিজটির পিলার ও বিভিন্ন অংশের পলেস্তার খসে পড়ে। খবর পেয়ে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেতুর সামনে সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। বেশ কিছু দিন ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও সেগুলো আবার শুরু হয়েছে। নদীতে চলমান ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর চারটি পিলার, ভিম ও রেলিংয়ের বিভিন্ন অংশের পলেস্তার খসে পড়েছে।
স্থানীয় সিএনজি চালক লোকমান হোসেন বলেন, এই ব্রিজটি পার হওয়ার সময় এই ভেবে বুকটা কেঁপে ওঠে যে, এই বুঝি ব্রিজটি ভেঙে পড়ল।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন এ ব্রিজ দিয়ে কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া ব্রিজটি রাজধানী ঢাকার সাথে রূপগঞ্জের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
এ দিকে বালু নদ দিয়ে দিন-রাত বালুবোঝাই বাল্কহেড ও মালবাহী ট্রলার চলাচল করে। এ সব বাল্কহেডের ধাক্কায় ব্রিজর পিলারগুলো ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত কবির বলেন, ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বার বসানো হয়েছে। যাতে যান চলাচল করতে না পারে। সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে ব্রিজটি।


আরো সংবাদ



premium cement