২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্বাস্থ্যগত-জরুরি-অবস্থা-ঘোষণার-সময়-এসেছে

নিয়ন্ত্রণহীন বায়ুদূষণে ‘আইসিইউতে’ রাজধানী

-

নিয়ন্ত্রণহীন দূষণে এখন ‘আইসিইউতে’ রাজধানী ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শহরে এখন স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় চলে এসেছে। রাজধানীর বায়ুদূষণের পরিমাণ এতই বেড়েছে যে, প্রতিদিন তার পারদ বিপজ্জনক অবস্থার নিচে কিছুতেই নামছে না। করোনা মহামারী শুরুর পর লকডাউনে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হলেও গত কয়েক মাসের মাথায় দূষণ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়েই মানের সূচকে ঢাকা বিশ্বে দূষণের এক নম্বরে অবস্থান করে আসছে, যা গতকাল পর্যন্ত দূষণে পাঁচ বছরের রেকর্ড ছেড়ে আবারো বিশ্বের শীর্ষে স্থান পেয়েছে। দূষণের সূচকে গতকাল ঢাকার অবস্থান ছিল ৩৭৯, যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০ গুণ বেশি।
গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বায়ুদূষণের মাত্রা দুই বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে। কিন্তু গতকাল তা পাঁচ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে। সর্বশেষ গেল বছরের ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে সাত গুণ বেশি। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল সহনীয় মাত্রার পাঁচ গুণ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে। একিউআই সূচকে ৫০-এর নিচে স্কোর থাকার অর্থ হলো বাতাসের মান ভালো। এ সূচকে ৫১ থেকে ১০০ স্কোরের মধ্যে থাকলে বাতাসের মান গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেয়া হয়। তবে একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে নগরবাসী বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া একিউআই মান ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ লোকদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। একিউআই স্কোর ৩০১ থেকে ৫০০ বা তারও বেশি হলে বাতাসের মান ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ প্রত্যেক নগরবাসীর জন্য জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়।
কিন্তু বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী, গতকাল সকালে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা। সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে ২১৬ একিউআই স্কোর নিয়ে রাজধানীর বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয় ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গড়ে ঢাকা প্রথম অবস্থানে ছিল এবং দূষণের সূচক ৩২৬ পর্যন্ত উঠেছিল। এর আগের দিনও সকাল ৯টায় দূষণের শীর্ষে ছিল ঢাকা। একই অবস্থা ছিল মঙ্গলবার ও সোমবারও।
অন্য দিকে শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রার কয়েক গুণ ছাড়িয়ে গেছে ঢাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দ একজন মানুষকে অস্থায়ীভাবে বধির করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবল শব্দ সম্পূর্ণভাবে বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীতে শব্দদূষণের মাত্রা গড়ে ১২০ থেকে ১৩০ ডেসিবল পর্যন্ত অতিক্রম করেছে, যা মানুষের বধির হওয়ার মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। শব্দদূষণের এমন মাত্রাকে বিশেষজ্ঞরা নীরব ঘাতক মন্তব্য করেছেন।
এ দিকে ১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (সিপিইউ) এক তালিকা প্রকাশ করে। তাতে বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকার মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আসে ঢাকার নাম।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে ঢাকা এখন আইসিইউতে আছে এমন মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজধানীতে এখন স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় চলে এসেছে। এখনই বায়ু ও শব্দদূষণ থামাতে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, গত কয়েক মাস থেকে রাজধানী দূষণ মাত্রার বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালও ঢাকা ছিল দূষণে বিশ্বের এক নাম্বারে। তিনি জানান, গতকাল বিকেলে রাজধানীর বাতাসে দূষণের মাত্রা ছিল ৩৭৯, যা গত পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ।
তিনি জানান, অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন বায়ুপ্রবাহ কমে গেছে। যার কারণে দূষণের উৎসগুলোর অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে না। এতে করে বায়ুদূষণ বাড়ছে। অন্য দিকে শীতের ভরা মৌসুমেও কখনো কখনো গরম অনুভূত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা এখন আইসিইউতে আছে মন্তব্য করে এই বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজধানী এখন মানুষের বসবাসের অযোগ্য। এই নগরীতে এখন স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় চলে এসেছে। কারণ এমনিতেই প্রতিদিন দূষণের মাত্রা তিন শ’-এর কাছাকাছি থাকছে। এর মধ্যে গতকালের যে মাত্রা ছিল তা সহনীয় মাত্রার ২০ গুণ বেশি, যা মানুষের স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তাদের মতে, পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল এবং নির্মাণাধীন এলাকায় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা; সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটানো; কালো ধোঁয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা; অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করাসহ এখনই দূষণ থামাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
পরিবেশ অধিদফতরের বর্তমান পরিচালক ও বায়ুমান বিভাগের সাবেক পরিচালক মো: জিয়াউল হক উদ্বেগ প্রকাশ করে নয়া দিগন্তকে বলেন, বায়ুদূষণের মাত্রা মাঝে মাঝে এত বেড়ে যাচ্ছে যে, তা চার শ’তেও চলে যাচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে রাজধানীতে মানুষের বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা আগামী মাসের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। তিনি জানান, দূষণের জন্য দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিম থেকে প্রায় ২০ ভাগ দূষিত বায়ুর স্তর অসছে। কিন্তু বাতাসের গতি কম থাকায় দূষিত স্তর সরে যেতে সময় লাগার কারণে রাজধানীতে দূষণ বাড়ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে জবি, বন্ধ থাকবে পরীক্ষা কুড়িগ্রামে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেওয়ানগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব কিশোরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ সাতক্ষীরা বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলআরোহী নিহত বার্সেলোনাতেই থাকছেন জাভি চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজে হাজারো মুসুল্লির কান্না পোরশার নোচনাহারে আগুনে ৩টি দোকান পুড়ে গেছে খুলনা বিভাগ ও ৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ ‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’

সকল