২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ কামরাঙ্গীরচরবাসী

-

মাদক কারবার চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের অভায়ারণ্য হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা। সরকারি দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় লালিত একাধিক চক্রের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকার মানুষ। এমনকি তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না খোদ সরকারি দলের নেতাকর্মীরাও। কারণে-অকারণে অস্ত্র প্রদর্শন করে শোডাউন দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা এসব সিন্ডিকেটের নেশায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় বছরের পর বছর এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। মাঝে মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও সহজেই ছাড়া পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব অপরাধী।
অভিযোগ রয়েছে এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান রতন, কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এইচ মাসুদ মিন্টু এবং তাদের সহযোগী বাবু দেওয়ান।
কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল হামিদ বলেন, হঠাৎ করে নেতা হয়ে জোর জুলুম শুরু করে দিয়েছে মিন্টু। তার যন্ত্রণায় সম্মান নিয়ে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। কিন্তু চরম বেয়াদবি আচারণের কারণে তার কোনো বিচার পর্যন্ত করা যাচ্ছে না।
৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, রতন নিজেকে ছোট খাটো একজন গডফাদার মনে করে থাকে। দলীয় পদ ব্যবহার করে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এলাকায় মাদক কারবার আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। রসুলপুর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, বাবু দেওয়ান এক সময় বিয়ারের ব্যবসা করত এখন রতন আর মিন্টুর সাথে সিন্ডিকেট করে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে ইয়াবা আনে এবং পর্যটন ও ভ্রমণের নামে খারাপ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিয়ে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মিন্টু। এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক হারে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন মিন্টু। সম্প্রতি আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। তার অত্যাচারে ইতোমধ্যে নুর সুপার মার্কেটের মালিক নুরু মিয়া ও তার ছেলে খোকন এলাকা ছেড়েছেন। পুরো নূর সুপার মার্কেটের প্রায় ৩০০ দোকান এখন মিন্টুর দখলে। এ ছাড়াও টেকেরহাটি, চান মসজিদ, আবু সাঈদ বাজার, নবীনগর মার্কেটে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে মিন্টুর বাহিনী।
শুধু চাঁদাবাজিই নয় স্থানীয় বাবু দেওয়ান নামে এক তরুণকে সাথে নিয়ে রতন ও মিন্টু পর্যটন ব্যবসার নামে গড়ে তুলেছেন যৌন ও মাদক কারবার। কম টাকায় আকর্ষণীয় জায়গায় ভ্রমণের টোপ দিয়ে উঠতি বয়সী তরুণদের আকৃষ্ট করছে তারা। ফলে একশ্রেণীর মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় বাবু দেওয়ান ফেসবুক পেজ থেকে মাসে অন্তত দুবার আয়োজন করা এসব ট্যুর। এসব ট্যুরে তরুণীদের যুক্ত করা হয় মনোরঞ্জনের জন্য। পিকনিকের ব্যানার ব্যবহার করে গাড়িতেই মাদকের চালান আনা হচ্ছে বলে জানিছেন ভ্রমণে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ। সূত্র জানায়, এই চক্রের মাদক পাচারের রয়েছে বেশ কিছু অভিনব কৌশল। ইয়াবা ও ফেনসিডিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছানোর জন্য দলীয় কর্মসূচি ডাকা হয়। কর্মসূচির নামে শতাধিক মোটর সাইকেলের বহরের মধ্য দিয়ে মাদক চালান করে দেয়। এভাবে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রাজনীতির আড়ালে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে এ চক্র। এই চক্রের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানাসহ বিভিন্ন থানায় মাদক ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব মামলায় রতনসহ কয়েকজন জেল খেটেছে।
তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এমনকি নানা কারণে রেহাই পাচ্ছে না দলীয় নেতাকর্মীরাও। সম্প্রতি নবীনগর, চান মসিজদ, টেকেরহাটি, রসুলপুর, খোলামোড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় মিন্টু ও তার সহযোগীরা। প্রতিপক্ষ গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী রবিন ও সোহাগকে পিটিয়ে এবং বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে করে চক্রের সদস্যরা। ইলিয়াস নামের এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর ওপর হামলা করে নাক ভেঙে দেয়া হয়। শাজাহান, সবুজ সানি ও সোহেলের ভয়ে প্রাণ ভয়ে ওই ব্যবসায়ী এখন এলাকা ছাড়া। টেকের হাটি নূর সুপার মার্কেটের ইলিয়াস মৃধা বলেন, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় আমার ওপর হামলা চালায় সজল, আবদুর রহিম, সোহেল ও সিরাজসহ বেশ কয়েকজন। পরে তাকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখালে গত ৪ ডিসেম্বর আমি কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা করি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান রতন বলেন, সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে বা তিনি যেসব মামলায় জেলে গিয়েছিলেন সেসব মামলা ছিল রাজনৈতিক। তিনি বা মিন্টু এর সাথে জড়িত নন।
একইভাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে মিন্টু বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে তার প্রতিপক্ষের লোকজন মিথ্যা অভিযোগ করছেন। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি কোনো ধরনের মাদক কারবার বা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নন। বরং এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি ও রতন বদ্ধপরিকর।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল