২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীতে শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রার আড়াই গুণ বেশি

-

রাজধানীতে বর্তমানে শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি, যা মানুষের বধির হওয়ার মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। শব্দদূষণের এমন মাত্রাকে বিশেষজ্ঞরা নীরব ঘাতক মন্তব্য করে বলছেন, দূষণের এমন মাত্রা অব্যাহত থাকলে মানুষের মধ্যে বধিরতার হার বাড়তে থাকবে।
দেশের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। এর বাইরে শব্দদূষণ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত।
কিন্তু পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন রাজধানীর কোথাও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নেই। একেক এলাকায় একেক রকম হলেও গড় হিসেবে রাজধানীতে তা সহনীয় মাত্রার আড়াই গুণ বেশি, যা মানুষের বধিরতার মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দ একজন মানুষকে অস্থায়ীভাবে বধির করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবল শব্দ সম্পূর্ণভাবে বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং পবার সম্পাদক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, তাদের একাধিক গবেষণায় এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বধিরতার প্রমাণও মিলেছে। তার ভাষায়, গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন বর্তমানে রাজধানীতে শব্দদূষণের মাত্রা গড়ে ১২০ থেকে ১৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত অতিক্রম করেছে, যা সহনীয় মাত্রার প্রায় আড়াই গুণ।
শব্দদূষণ দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সময় ভেদে শব্দদূষণের মাত্রায় রকম ফের হলেও কোথাও নিয়ন্ত্রণে নেই। বর্তমান পরিস্থিতে এটা নিশ্চিত যে, শব্দদূষণ মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় এটি আমাদের জন্য নীরব ঘাতক হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘিœত হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দেবে।
এ ছাড়া উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জানিয়ে তিনি বলেন, আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সঙ্কোচন করে এবং পরিপাকে বিঘœ ঘটায়। হঠাৎ বিকট শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড চাপ দেয়। উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
গাড়ির হর্ন, মাইকের ব্যবহার শব্দদূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, যানবাহনের হর্ন, ভবনের নির্মাণকাজ, কলকারখানা এবং মাইকিংয়ের বিশেষ করে সিগন্যালগুলোতে একসাথে কয়েক শ’ গাড়ির হর্নে দিন দিন এমন দূষণ বাড়ছে। এ ছাড়া উচ্চশব্দে মাইকের ব্যবহার, ভবন নির্মাণে যন্ত্রের ব্যবহারেও নিয়ম না মানায় শব্দদূষণ বাড়ছে। তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় দিন নেই রাত নেই পাইলিংয়ের কাজ, ইটভাঙার যন্ত্র, সিমেন্ট মেশানোর মেশিনের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। মধ্যরাত এমনকি সারা রাতজুড়ে নির্মাণকাজ চলে। কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে কিনা, শিশুদের পড়াশুনার ক্ষতি, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের কষ্ট কোনো কিছুই অসময়ে নির্মাণকাজ থামাতে পারে না। এ ছাড়া রাজনৈতিক সভা থেকে শুরু করে বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পিকনিক সব ক্ষেত্রে এর কানফাটানো শব্দ চলে। আইন অনুযায়ী এসব নিয়ন্ত্রণে না আনলে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা অসম্ভব বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement