২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ওটিটি তদারকি করতে ৩ মাসের মধ্যে নীতিমালা করার নির্দেশ

-

ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম নির্ভর কনটেন্ট প্রকাশের ওপর তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে এর একটি খসড়া নীতিমালা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো: খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে বিটিআরসি ও পুলিশের দেয়া প্রতিবেদন দেখার পর এ আদেশ দেন।
তথ্যসচিব ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে তিন মাসের মধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করতে বলা হয়েছে।
আইনজীবীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যেসব ভিডিও কনটেন্ট প্রচার-পরিবেশন করা হচ্ছে, তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য এবং তদারকি, নিয়ন্ত্রণসহ এসব মাধ্যম থেকে কিভাবে রাজস্ব আদায় করা যায়, তার জন্য নীতিমালা করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও কিভাবে রাজস্ব আদায় করা যায় সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করার জন্য সরকার থেকে যে কমিটি করে দিয়েছে, সে কমিটিকে বলা হয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে খসড়া নীতিমালা করে আদালতে দাখিল করতে হবে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অতিরিক্ত তথ্যসচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি করা হয়েছিল। বিটিআরসির মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি, এনবিআরের একজন প্রতিনিধি ছাড়াও আইনজীবী রেজা-ই-রাকিব আছেন সেই কমিটিতে।
আদালতে বিটিআরসির প্রতিবেদনটি দাখিল করেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ মহাপরিদর্শকের দেয়া প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিটকারী পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, গত বছর একটি ইংরেজি দৈনিকে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সে প্রতিবেদনে বলা হয়, নেটফ্লিক্স বছরে ১৮০ কোটি টাকা আয় করে বাংলাদেশের গ্রাহকদের কাছ থেকে। এরকম প্ল্যাটফর্ম এখন অনেক আছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। তাছাড়া অনেক ভিডিও কনটেন্ট এসব প্ল্যাটফর্মে ছাড়া হচ্ছে, যা আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সাথে যায় না। ফলে এর তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সেজন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন। সে কারণে আদালত এ আদেশ দিয়েছে।
ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন রোধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’ চ্যালেঞ্জ করে গত বছর ১২ জুলাই হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। ওইসব প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ-তদারকিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয় সেখানে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছর ১৫ জুলাই আদালত ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ কনটেন্ট সরাতে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।
সেই সাথে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে দেশে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট’ পরিবেশনের বিষয়ে অনুসন্ধান করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন রোধে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। বিটিআরসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাথে বিটিআরসির কোনো চুক্তি হয়নি এবং আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো বিটিআরসির লাইসেন্সপ্রাপ্তও নয়। বিটিআরসি এসব ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে কোনো রাজস্ব সংগ্রহ করে না। ফলে আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওপর বিটিআরসির কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওটিটি নির্ভর এ ধরনের প্ল্যাটফর্মের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এসব প্ল্যাটফর্ম কোনো টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল ব্যবহার না করে সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের কনটেন্ট দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। ফলে একজন দর্শক কোনো ধরনের কেবল অথবা ডিশ অ্যান্টেনা ছাড়াই শুধু ইন্টারনেট এবং স্মার্ট টিভি/ফোন ব্যবহার করে এসব ওয়েব কনটেন্ট দেখতে পারে। ফলে ওটিটি নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশেই দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশের বাইরে এ ধরনের বেশ কিছু বিখ্যাত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, জিফাইভ, হটস্টার, আড্ডা টাইমস ও হইচই। এর বাইরেও শত শত আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মে যেকোনো দেশের জনগণ সাবস্ক্রিপশন কেনার মাধ্যমে কনটেন্ট দেখতে পারে। এ ধরনের শত শত ওটিটি নির্ভর প্ল্যাটফর্মের হাজার হাজার কনটেন্ট রয়েছে, যাতে এমন অনেক অনৈতিক বক্তব্য, ছবি ও ভিডিওর ব্যবহার রয়েছে, যা আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাংঘর্ষিক।


আরো সংবাদ



premium cement