২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তালাক দেয়ায় সাবেক স্বামীর হাতে খুন হয় ইয়াসমিন ও তার বোন

-

মাদকাসক্ত এবং বহু বিয়ের কারণে স্বামীকে তালাক দেয়াই কাল হয়েছিল দুই বোনের। যার কারণে দুই বোনকেই নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে। হত্যাকারী রনি মিয়া তার সাবেক স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকেই খুন করতে বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু ইয়াসমিনের অনুপস্থিতিতে সেখানে তার ছোট বোন সীমুকে পেয়ে যায়। পারিবারিক বিষয় নিয়ে তর্কে জড়ালে প্রথমে সীমুকে গলা টিপে হত্যা করে রনি। এরপর ইয়াসমিন বাসায় ফিরলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। স্বামীর দায়ের কোপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন ইয়াসমিন। একই সাথে চেষ্টা করেছিলেন প্রতিবেশীরাও। কিন্তু তাদের কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি। অনেকের চোখের সামনেই মৃত্যু হয় ইয়াসমিনের। ঘাতক রনি ভেতর থেকে দরজা আটকিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে দুই বোনের।
গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পূর্ব নাখালপাড়ার একটি বাসায় ঘটেছিল এমন নির্মম ঘটনা। শিল্পাঞ্চল থানার ওসি বিপ্লব কুমার শিল নয়া দিগন্তকে বলেন, এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া রনি হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, মাদকাসক্ত ও বহুগামী হওয়ায় রনিকে তালাক দিয়েছিল ইয়াসমিন। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইয়াসমিন ও তার বোন সীমুকে কুপিয়ে ও গলাটিপে হত্যা করে রনি। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, মাদকাসক্ত রিকশা চালক রনি মিয়া ছিল বিয়েপাগল মানুষ। যেখানেই সুযোগ পেতে মেয়েদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে বিয়ে করত। অথবা অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করত। ইয়াসমিনকেও সে একইভাবে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করেছিল। পেশায় রিকশাচালক হলেও সংসারের জন্য ব্যয় করার মতো টাকা থাকত না তার কাছে। যে টাকা আয় করত তার থেকে বেশি ব্যয় করত মাদকের পেছনে। আর ওই বাড়তি টাকা নিতে হতো তার গার্মেন্টকর্মী স্ত্রী ইয়াসমিনের কাছ থেকে।
রনির অপকর্মের নানা বিষয়ে জানতে পেরে সম্প্রতি ইয়াসমিন তাকে তালাক দেয়। এরপর ছোট বোন সীমুকে নিয়ে নাখালপাড়ার ওই বাসায় বসবাস করতে শুরু করে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে রনি। সে ইয়াসমিনকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয় ইয়াসমিনকে খুন করবে। সে অনুযায়ী ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে ইয়াসমিনের বাসায় যায়। কিন্তু তখন সীমু একা বাসায় ছিল। রনি সীমুর সাথে তাদের পারিবারিক বিষয়ে কথা বলতে থাকে। কিন্তু সীমু তার অপকর্মের বিষয় তুলে ধরলে ক্ষিপ্ত হয় রনি। সে সীমুকে গলাটিপে হত্যা করে লাশ কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে। এরপর অপেক্ষা করতে থাকে ইয়াসমিনের জন্য। দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে তার সাবেক স্ত্রী ইয়াসমিন। রনিকে বাসায় দেখেই ইয়াসমিন ছুটে যায় সীমুর কাছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে সীমাকে কম্বল জড়ানো দেখে তাকে ডাকতে থাকে।
এ সময় রনি রান্নাঘর থেকে একটি ধারালো দা এনে প্রথমে ইয়াসমিনকে পেছন থেকে কোপাতে শুরু করে। ইয়াসমিনের চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা জানালা দিয়ে সেই দৃশ্য দেখতে থাকে। এ সময় ইয়াসমিন বাঁচার জন্য সবার সহযোগিতা চান। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করতে ছুটেও আসেন। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় তার কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। একপর্যায়ে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলেও বাঁচাতে পারেননি ইয়াসমিনকে। ভেতরে গিয়ে ইয়াসমিনের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে। পরে তারা রনিকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।


আরো সংবাদ



premium cement