২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বগুড়ায় সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি চাষিরা

আলু বীজ সঙ্কট
বগুড়ার শেরপুরে আলু লাগানোর জমি তৈরিতে ব্যস্ত কৃষকেরা : নয়া দিগন্ত -

বগুড়ায় আলু বীজ সঙ্কট কাটছে না। বিএডিসি সরবরাহ করে চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ। তাই চড়া দামে বীজ কিনে বপন করতে হচ্ছে চাষিদের। ফলে আলু চাষে আগ্রহ থাকলেও বীজের অভাবে অনেক চাষি এখনো বসে আছেন। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে চাষিরা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ রবি মৌসুমে বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এই চার জেলায় এক লাখ এক হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে বগুড়া জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর, জয়পুরহাটে ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর, পাবনায় ৯৮০ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে তিন হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের টার্গেট রয়েছে। প্রতি হেক্টরে বীজের প্রয়োজন ১ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন। এবার আলুর দাম বাজারে অধিক হওয়ায় লাভের আশায় চাষিরা ব্যাপকভাবে আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তাই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বগুড়া জেলায় কমপক্ষে তিন হাজার হেক্টরের বেশি আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন চাষিরা। অন্যান্য জেলাতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু চাষের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রায় সময়েই আলু বীজ সঙ্কটে সমস্যায় পড়েন চাষিরা। কারণ সরকারি সংস্থা বিএডিসি মাত্র ৫ শতাংশ বীজ সরবরাহ করে। বাকি ৯৫ শতাংশ চাষিরা নিজেরা বা বেসরকারিভাবে মেটানো হয়। এবার চাষ বেশি হওয়ায় বীজ সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকদের জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিলারদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দামে আলুবীজ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা বীজ আলু ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের সে দিকে কোনো নজর নেই।
শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় দুই হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে বীজ দরকার প্রায় দেড় মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী উপজেলায় মোট বীজের প্রয়োজন তিন হাজার ৯৪ মেট্রিক টন। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে মাত্র এক হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, যা অর্ধেকেরও কম। আর এসব বীজ বিক্রির জন্য প্রায় ৪৫ জন ডিলার রয়েছেন। এরমধ্যে বিএডিসির ১৮ জন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আটজন ও অন্যান্য কোম্পানির ১৯ জন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিলাররা উত্তোলন না করায় সরকারি সংস্থা বিএডিসির আলুবীজ বাজারে এলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই ভালো ফলন পাওয়ার আশায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজের আলুবীজের দিকে কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন। কিন্তু বাজারে এই কোম্পানিসহ অন্যান্য কোম্পানির বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ডিলার ও ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে ঘুরেও বীজ পাচ্ছেন না চাষিরা। তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিলেই মিলছে বীজ। তাই আলু চাষের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষের কথাও ভাবছেন তারা।
উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের আলুচাষি দুলাল হোসেন, শাহ আলম, ফারুক হোসেন, আব্দুস সাত্তারসহ একাধিক ভুক্তভোগী চাষি অভিযোগ করেছেন, ব্র্যাকের ৪০ কেজি ওজনের বীজ আলুর বস্তা বি-গ্রেড দুই হাজার ৮০ টাকা ও এ-গ্রেড দুই হাজার ২০০ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি। এরপরও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না বীজ। তারা আরো জানান, গেল মৌসুমে বাজারে ভালো দাম পেয়ে কৃষক এবার আলু চাষে ঝুঁকে পড়লেও বেশি দামে বীজ কেনার কারণে একরপ্রতি আট থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ পড়ছে। এতে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। তাই আগামীতে আলুর ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এসব কৃষকের দাবি, বীজ কোম্পানির একটি চক্রের সাথে ডিলার-ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আগাম বুকিংয়ের নামে বীজবাণিজ্য করছে। এমনকি বেশি দামে আলু বীজ বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অথচ বিএডিসিসহ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির ডিলাররা বীজ বিক্রির ওপর কমিশন পান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরে তেমন কোনো মনিটরিং না থাকার সুযোগ নিয়ে মুনাফাখোর ওই চক্রটি পরিকল্পিতভাবে বাজারে আলু বীজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছে। এমনকি কোম্পানির নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি টাকা নিয়ে বীজ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। আর কৃষকদের এসব অভিযোগ খোদ ডিলাররাও স্বীকার করেছেন।
ব্র্যাকের বীজ ডিলার মো: রফিকুল ইসলাম বীজ সঙ্কটের কথা জানিয়ে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী এ উপজেলায় বীজের বরাদ্দ নেই। বরং বরাদ্দ আরো কমেছে। তাই এবার শেষ পর্যন্ত আলু বীজের সঙ্কট থেকেই যাবে। বীজের দাম বাড়ার পেছনে সাব-ডিলারদের দায়ী করে তিনি বলেন, প্রত্যেক বীজ ডিলার আবার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাব ডিলার (বীজ বিক্রেতা) নিয়োগ দিয়েছেন। তারা আগাম টাকা ও বুকিং দিয়ে আলু বীজ নিচ্ছেন। মূলত তারাই কোম্পানির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছেন বলে জানান। বিএডিসি ও ব্র্যাকের আরেক ডিলার ফিরোজ উদ্দীন মাস্টার বলেন, সবেমাত্র আলু লাগানো শুরু হয়েছে। সবাই একসাথে আলু লাগানোর কারণে আলু বীজের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া যেসব কৃষক আগাম বুকিং দিয়েছেন তারাই আগে বীজ পাচ্ছেন। তা ছাড়া বিগত বছরগুলোতে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে এবার একটু লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন বলেও স্বীকার করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: শারমিন আকতার বলেন, এখানে বীজের সঙ্কট নেই। সময়মতো সব কৃষকই বীজ পাবেন। তাই বীজের কারণে আলু চাষ ব্যাহত হবে না। ডিলাররা নির্ধারিত দামের বাইরে বীজ বিক্রি করতে পারবেন না। এর অন্যথা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়ার উপপরিচালক বেলাল হোসেন বলেছেন, বীজের দাম বিএডিসি নির্ধারণ করে দেয়। এখানে কৃষি বিভাগের কোনো করণীয় নেই। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমপক্ষে তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ জমিতে বীজ বপন শেষ হয়েছে। বর্তমানে আলুর দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা আলু চাষ বেশি করছেন। তাই বীজের চাহিদা বেড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল