প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কিছু ব্যাংক সহায়তা করছে না
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংলাপে অভিযোগ- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
সরকারঘোষিত প্রণোদনার অর্থ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা কাক্সিক্ষত হারে পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে কিছু ব্যাংক সহায়তা করছে না বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। আর এই কথা শুনে অনেকটা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, প্রণোদনার অর্থ আমরা পাঠাচ্ছি। কিন্তু তার বড় একটা অংশ যাচ্ছে না বা অনেকেই সহায়তা পাচ্ছে না। প্রণোদনা ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের নির্দেশ মানতে ব্যাংকগুলো বাধ্য। কিন্তু কিছু ব্যাংক প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করছে, বাকিরা করছে না। সিনিয়র অর্থসচিব নিজেই এ কথা বললেন। ব্যাংকগুলো কেন নির্দেশ মানছে না, সমস্যাটা কোথায়Ñ এটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কোভিড-১৯ মোকাবেলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের নেয়া প্রণোদনা প্যাকেজ বিষয়ক দ্বিতীয় সভা ‘কর্মসৃজন ও গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ পরামর্শ দেন। অর্থ বিভাগ আয়োজিত এ সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্যে রাখেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো: মাসুদুর রহমান।
কোভিড মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ ‘সঠিক’ ছিল এমন মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে আমরা সার্বিকভাবে উতরে গেছি সেটা বলব না। খুঁটিনাটি কিছু ব্যর্থতা ছিল। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। ব্যর্থতার কারণ আমরা খুঁজে দেখব কিন্তু অর্জনটাকে আমরা ফেলে দেবো না। আমাদের অর্জিত সক্ষমতা ও জনগণের ঐক্য থাকলে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ আমরা মোকাবেলা করতে পারব। তিনি বলেন, তবে প্রণোদনার পর প্রণোদনা বা ভর্তুকি যথাযথ সমাধান নয়। এর বিকল্প হিসেবে আমাদেরকে সংস্কারমুখী হতে হবে এবং পলিসি সাপোর্ট বাড়াতে হবে। এতে রিটার্নটা বেশি হবে। তিনি আরো বলেন, কোভিড মোকাবেলায় সরকারের কৌশলের মূল বার্তাটি হচ্ছে স্বাবলম্বী হওয়া। আমাদের সবাইকে সার্বিকভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হলো মিস টার্গেটিং। এর ফলে আমরা সার্বিকভাবে রিটার্ন কম পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এই জায়গাটা ঠিক করতে পারছেন না। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা ঋণ না-পাওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এদের বেশির ভাগ স্বামী ও স্ত্রী এবং তারা পারিবারিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এরা ব্যাংকে যান না বিধায় প্রণোদনা ঋণ পাচ্ছেন না। তাদেরকে ব্যাংকের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে প্রণোদনা ঋণ কাজে আসবে না।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহের উল্লম্ফনে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে হুন্ডি লেনদেন কমে গেছে, নাকি আমাদের ২ শতাংশ প্রণোদনা ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছে সেটা গবেষকদের খুঁজে বের করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা ঋণ পাচ্ছেন নাÑ এটা সঠিক নয়। সংখ্যার হিসাবে সুবিধাভোগীর সংখ্যা কম নয়। সিএমএসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজে ৯ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ২১৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এটি প্যাকেজের ৪১ দশমিক ০৯ শতাংশ। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬১ হাজার ৯১৩ জন। অন্য দিকে কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণের বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে প্রণোদনার ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে সিনিয়র অর্থসচিব ফজলে কবির বলেন, লকডাউনের কারণে প্রণোদনা ঋণ বিতরণকার্যক্রম শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৬ থেকে ৫৭ শতাংশ অর্থছাড় করা হয়েছে। এক শ’ উপজেলায় ভাতা সরবরাহের কাজ ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। আগামী মাস থেকে এটি চালু হবে। কোভিডের প্রভাব মোকাবেলায় দ্বিতীয় দফা বাজেট সহায়তার জন্য এডিবিসহ দাতাদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ড. শামসুল আলম বক্তব্যে কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আরো বাজেটসহায়তা ও ওডিএ আশা করেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যদি কর-জিডিপির অনুপাত নেপালের সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতাম তবে এই প্রণোদনা প্যাকেজ হতো সবচেয়ে বড়। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা