পাবনা সুগার মিলসহ ৬ চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে ঈশ্বরদীতে বিক্ষোভ

পাবনা সুগার মিলসহ ছয় চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে ঈশ্বরদীতে শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিদের বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও মিলের কারখানার সামনে অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দেশের ছয়টি চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকালে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় পাবনা সুগার মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় দাঙ্গা পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ মিল গেটে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি হয়।
এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হলে বিক্ষোভকারীরা মিলগেটে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেন। মিল চালু রাখার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক লীগের আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন, পাবনা চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল, শ্রমিক নেতা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। সভাপতিত্ব করেন আখচাষি ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান আলী বাদশা।
গত মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১১৬ নং স্মারকের এক চিঠিতে বলা হয়, চিনি আহরণের হার, আখের জমি, মিলের অবস্থা/দক্ষতা, লোকসান ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনায় চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে ১৫টি চিনিকলের মধ্যে অধিকতর বিবেচনায় ৯টি চিনিকলে উৎপাদন পরিচালনা করা এবং অবশিষ্ট ছয়টি মিলে আখ মাড়াই না করার প্রস্তাব করা হলো। আখ মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাবনা সুগার মিল, কুষ্টিয়া সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, শ্যামপুর সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও সেতাবগঞ্জ সুগার মিল।
এই চিঠি বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের থেকে গতকাল বুধবার সকালে ১৯১৯ নং স্মারকে পাবনা সুগার মিলে পাঠানো হয়। করপোরেশনের এই চিঠি পাবনা সুগার মিলে আসার আগে মঙ্গলবার বিকেলে মিলের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিদের মধ্যে মিল বন্ধের বিষয়টি জানাজানি হয়। মঙ্গলবার বিকেলে থেকেই শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষুব্ধ ছিল। বুধবার সকালে চিঠি পৌঁছলে শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
সূত্র জানায়, যেসব মিলে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই করা হবে না সেসব এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহকৃত আখ নিকটস্থ চালু চিনিকলে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। উৎপাদন স্থগিতকৃত মিল থেকে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চালুকৃত মিলে সংযুক্ত/বদলি পূর্বক সমন্বয় করা হবে। পরবর্তী মৌসুমে ছয়টি চিনিকলের সাথে ফরিদপুর চিনিকল ও রাজশাহী চিনিকলেও আখ মাড়াই স্থগিতের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা চিঠিতে বলা হয়েছে।
পাবনা চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল জানান, আখচাষি ফেডারেশনসহ ছয়টি চিনিকলের নেতৃবৃন্দের বৃহস্পতিবার (আজ) ঢাকায় সমাবেত হওয়ার কথা রয়েছে। এখান থেকেই বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ছয়টি চিনিকল বন্ধ ঠেকাতে পাঁচ দফা দাবিতে পাবনা সুগার মিলসহ ছয়টি চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশন যৌথভাবে গত কয়েক দিন ধরে চিনিকল এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আন্দোলন আরো বেগমান হবে বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন ।
অপর দিকে ছয়টি চিনিকল বন্ধ ঠেকাতে পাঁচ দফা দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ আখচাষি ফেডারেশন ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বানে সংগঠন দু’টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাবনা চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন।v