বিবিসি নির্বাচিত ১০০ মহিলায় ঠাঁই পাওয়া কক্সবাজারের রিমার কথা
- কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা
- ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:২৮
বিবিসি ১০০ নারীর তালিকা ২০২০-এ ঠাঁই পেয়েছেন কক্সবাজারের রামুর মেয়ে রিমা সুলতানা রিমু। কৃষক বাবার মেয়ে ১৮ বছরের এই তরুণী বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় নারীদের শিক্ষার উন্নয়নে। রামু থেকে পরিচালিত বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার হয়ে কাজ করা রিমা দূর করতে চায় সমাজের অজ্ঞতা ও অন্ধকার।
গ্রামের সাদামাটা পরিবেশে বড় হওয়া রিমা এখন বিবিসি জরিপে ১০০ নারীর একজন। সমাজকে বদলে দেয়ার অঙ্গীকার তার চোখে মুখে। গ্রাম থেকে উঠে আসা রিমার গল্প এত সহজ ছিল না। সমাজে পদে পদে বাধাবিপত্তি থাকা সত্ত্বেও অনগ্রসর নারীদের শিক্ষার প্রসার এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কার্যক্রমে সচেতনতার কাজে এগিয়ে গেছেন রিমা।
কয়েক বছর ধরে রিমা সুলতানা রিমু রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুদের শিক্ষার প্রসার, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, বয়সভিত্তিক স্বাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা, রেডিও ব্রডকাস্ট ও থিয়েটার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে শান্তি, নিরাপত্তা ও নারীর অগ্রগতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
রিমা কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদারপাড়া এলাকার কৃষক আবদুর রহিম ও গৃহিণী খালেদা বেগমের মেয়ে। রিমু কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসি ফলপ্রার্থী। চার ভাইবোনের মধ্যে রিমা সুলতানা রিমু দ্বিতীয়।
রিমু কক্সবাজারভিত্তিক ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিসের একজন সদস্য। তিনি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব উইমেন পিস বিল্ডার্সের সক্রিয় কর্মী হিসেবে সঙ্ঘাতসঙ্কুল দেশ থেকে আসা কিশোরীদের কল্যাণে কাজ করছেন। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য নারীদের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাহিরা খান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দারিদ্র্যবিমোচনবিষয়ক বিশেষ সহকারী সানিয়া নিশতার, ভারতের নাগরিকত্ব আইনবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া ৮২ বছর বয়সী বিলকিস বানুসহ আরো অনেক সুপরিচিত ব্যক্তিত্বের সাথে এ তালিকাতেই ঠাঁই পেয়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী। এর মধ্যে রয়েছেন রামুর মেয়ে রিমা সুলতানা রিমু।
রিমা দুই বছর আগে বেসরকারি সংস্থা ইয়ুথ অর্গানাইজেশন ফর স্যোসাল অ্যাকশনের (ইউসা) শিক্ষাবান্ধব গ্লোবাল ইংলিশ লার্নিং সেন্টারে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় দক্ষতার পাশাপাশি এ সংগঠনের বিভিন্ন মানবিক সেবা ও কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন।
কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রিমা কাজ করে যাচ্ছেন। পেয়েছেন পরিবারের সহযোগিতাও। রিমা শোনালেন তার ভষিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। রামুর মেরোংলোয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জানালেন, রক্ষণশীল সমাজ থেকে নারীদের থএগিয়ে যাওয়াটা মোটেই সহজ ছিল না। তা জেনেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করাতেই রিমার আজকের এই সফলতা বলে জানান তিনি। রিমার এই স্বীকৃতিতে এলাকাবাসী ও তার সহপাঠীরা উচ্ছ্বসিত। রোহিঙ্গা নারী ও শিশু এবং স্থানীয় পিছিয়ে পড়া নারী শিশুর উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটির হয়ে কাজ করছেন ৩০ জন নারী, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিমা সুলতানা রিমু।