১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারত থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে অসহায় মা

-

প্রায় বছর তিনেক আগে অভাবের তাড়নায় দিনমজুর পিতার সাথে ঢাকা যাওয়ার পথে রাস্তায় হারিয়ে যায় ছেলেটি। ছেলেকে হারিয়ে সন্তানের পিতা এখন প্রায় আধাপাগল হয়ে পড়েছে। মাস তিনেক আগে ভারতে ছেলের খোঁজ মেলায় এখন সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক অভাগী মা। সরকারের কাছে সন্তানকে ফিরিয়ে আনার দাবি দরিদ্র বাবা-মায়ের।
ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাস্টার পাড়া মাধবরাম কাচ্চির গ্রামে বাসিন্দা দিনমজুর সোরাব আলীর (৭০) ও মরিয়ম বেগম (৪২) দম্পতির। এক ছেলে ও এক মেয়েসহ চারজনের সংসার। নিজের ভিটে মাটি না থাকায় আত্মীয়-স্বজনদের দেয়া ৩-৪শতক জমিতে কোনোরকম ঘর তুলে দিন কাটিয়ে দেন তারা। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার পরে কর্মহীন হয়ে পড়েন দিনমজুর সোরাব আলী। তাই কাজের সন্ধানে একমাত্র ছেলে মোফাচ্ছেল হককে (১৬) নিয়ে ঢাকা রওনা দেন তিনি। পথিমধ্যে বাসের যাত্রাবিরতীর সময় সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন সোরাব আলী। অনেক খোঁজ-খবর করেও সন্তানের সন্ধান পায়নি পরিবারটি। ফলে সন্তান হারানো শোকে সোরাব আলী আধপাগল হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ৩ বছর পরে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন, তাদের সন্তান বর্তমানে ভারতের আলীপুরদুয়ার বল্লোক কালচিনি জেলার জায়গাও থানার ব্লেস ফাউন্ডেশন রিহ্যাভিলিটিটেশন সেন্টার ফর (ড্রাগ অ্যালকোহল) ডিপেন্ডেন্ট পারসন,রামগাঁও ফায়ার স্টেশন নিউ রোডে রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হয় পরিবারটি। এরপর থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মরিয়ম বেগম।
মরিয়ম বেগম বলেন, কাজের সন্ধানে গিয়ে ছেলেকে হারিয়ে ফেলায় তার বাবা প্রায় পাগল হয়ে গেছে। তখন থেকেই পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কোনো কাজকর্ম করতে পারে না সে। অভাবের তাড়নায় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে স্বামী-স্ত্রীর দু’জনের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। ছেলেকে অনেক খুঁজেও কোনো লাভ হয়নি। কোথাও ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় এক বাসিন্দার আত্মীয় ভারতে থাকে তার মাধ্যমেই মোফাচ্ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই লোক আমার ছেলের সাথে কথা বলে নাম ঠিকানা পাওয়ায় ফেসবুকে ছবি দিলে আমরা তার সাথে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হই। এখন আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আমার বুকের ধনকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে দিক।
ব্লেস ফাউন্ডেশন রিহ্যাভিলিটিটেশন সেন্টার ফর (ড্রাগ অ্যালকোহল) ডিপেন্ডেন্ট পারসন সংস্থার জমির মালিক দাদিরাম বসুনিয়া বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে পথে সে পাগলের মতো এখানে ঘুরছিল। এরপর তাকে নিয়ে এসে আমরা লালন-পালন করছি। এখনো আমাদের কাছেই রয়েছে। ছেলেটির কাছ থেকেই ওর বাবা-মায়ের পরিচয় পাই। বাংলাদেশে আমার পরিচিত অনেকের সাথে যোগাযোগ করে ওর বাবা-মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়। এই বিষয়ে অনেকের সাথে কথা হলেও কেউ ছেলেটিকে ওর পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। দু’রাষ্ট্রের হাইকমিশনের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো সম্ভব বলে তিনি জানান।
এই বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী পরিবারটি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। ছেলেটি হারিয়ে যাওয়ার প্রায় তিন বছর হলো। পরে আমিও জানতে পারি মোফাচ্ছেল হক ভারতে আটকা আছে। আমি দরিদ্র বাবা-মায়ের হয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি তাদের সন্তানকে যেন ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে সরকার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement