২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রংপুর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পৌনে ৩ লাখ কৃষক

ভর্তুকি-প্রণোদনা পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা
-

তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, দুধকুমরসহ ৩৪টি নদ-নদীর ৫৪০ কিলোমিটার অববাহিকার রংপুর অঞ্চলে কয়েক দফা বন্যা ও অতিবর্ষণে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে ৩৫১ কোটি টাকা। এতে প্রায় পৌনে ৩ লাখ চাষির সাড়ে ২৯ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল নষ্ট হয়েছে। বিশাল এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি বিভাগ পাশে নেই বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। ভুর্তকি কিংবা প্রণোদনা কোনটাই পৌঁছেনি ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার পাঁচ দফায় বানের পানির কবলে পড়েছে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলা। অতিবর্ষণে উঁচু এলাকায়ও তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে প্রথম দফায় গত ২০ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত, ২০ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দুই দফা এবং ২০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে দুই দফায় বন্যা হয় এই অঞ্চলে। এ কারণে এই অঞ্চলের ৫ জেলায় ২৭ হাজার ২৭১ দশমিক ১৪ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫ জন কৃষক। টাকার অংকে এই ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০ কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০ টাকা। এর মধ্যে শুধু আমন ধানের জমি নষ্ট হয়েছে ২৪ হাজার ৮৪৬ দশমিক ৫৫ হেক্টরের। এছাড়া নষ্ট হয়েছে শাকসবজি ১ হাজার ৭৬৫ দশমিক ৫৭ হেক্টর, মাষকলাই ৫৭৯ দশমিক ৫২ হেক্টর, চিনাবাদাম ৭৯ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি নষ্ট হয়েছে রংপুরে ১০ হাজার ১৮ দশমিক ২৬ হেক্টর জমির ফসল। এছাড়া কুড়িগ্রামে ৯ হাজার ৭৮১ দশমিক ১ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৫ হাজার ৯৯৬ দশমিক ৮৭ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৯৫ দশমিক ২১ হেক্টর এবং নীলফামারীতে ৫৭৯ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে সরকারি হিসাবের চেয়েও অনেক বেশি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০০ কোটি টাকার উপরে। কৃষকরা জানিয়েছেন, এই বিশাল ক্ষতির মুখে পড়লেও পাশে ছিল না কৃষি বিভাগ। হতাশাগ্রস্ত কৃষকরা কোনো দিশা না পেয়ে বসে আছেন। অনেকেই তিন দফায় ধারদেনা করে ফসল লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরের দুই দফায় আর লাগাতে পারেননি। বিশাল অংকের লোকসানের বোঝা নিয়ে বসে আছেন তারা। ভর্তুকি কিংবা প্রণোদনারও কোনো অর্থ তারা পাননি। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষি বিভাগের কোনো লোকজন তাদের খোঁজ খবরও নেননি। প্রকৃতির ওপর ভর করেই আছেন তারা।
রংপুরের গঙ্গাচড়ার ছালাপাকের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আফজাল হোসেন জানান, প্রথম দুইবার বন্যার পর আবারও ঋণ করে আমন লাগাই। কিন্তু পরের বার এসে আবারও নষ্ট হয়ে যায়। কোনোভাবেই টাকা পয়সা না পাওয়ায় আর লাগাতে পারিনি। টিভিতে শুনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ভর্তুকি-প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা সেগুলো আজও চোখ দিয়ে দেখলাম না। এবার পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হবে। কাউনিয়ার বালাপাড়ার মন্দিরের পাড়ের কৃষক আজমল আলী জানালেন, সবজি যেকনা কইচচিনু, সেকনা প্রথম বারের পানিত চলি গেইচে। পরে এই জমিতে রোয়া লাগাই,এই বন্যা আসি খায়া যায়। শ্যাসম্যাস আর লাগাইতেই পারলাম না। জমি খাওন পরি আচে। সরকারের লোকজন যে একনা সহযোগিতা কইরবে, তামাক হামরা চোকেই দেইকনো না। বাল-বাচ্চা নিয়া কেমন করি যে দিন পার কইরমো এবার।’
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মো: মনিরুজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সব কৃষককে আমরা সহযোগিতা দিতে পারিনি। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক পরামর্শ ও বেশ কিছু কর্মসূচি আমাদের চলমান আছে। প্রথম বন্যার পর ট্রেতে বীজতলা তৈরির জন্য আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। দুর্গত এলাকায় ২২১ একর জমিতে আপৎকালীন কমিউনিটি বীজ তলা এবং ৫০০ ভাসমান বীজতলা তৈরি করে কৃষকদের সহযোগিতা করেছি। এখন ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে প্রণোদনার মাধ্যমে সরিষা, ভুট্টা এবং পেঁয়াজ চাষের জন্য কৃষকদের আমরা উদ্বুদ্ধ করছি।


আরো সংবাদ



premium cement