ড. কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি গণফোরাম একাংশের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০১
গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হলে ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণফোরামের একাংশ। গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের একাংশের নেতা সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এই হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, আমাদের সভাপতি (ড. কামাল হোসেন) এখানে (গণফোরাম) গঠনতন্ত্রবিরোধী যত কর্মকাণ্ড হয়েছে সব কিছু উনার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত সাক্ষাৎকার ও উদ্দেশ্যমূলক বিবৃতির মাধ্যমে জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্রহনন এবং দুষ্ট চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা, রাজনৈতিক ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কারণে শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসনের বিষয়ে গঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হবো।
সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত কী হতে পারে প্রশ্ন করা হলে সাবেক নির্বাহী সভাপতি বলেন, ‘উনি যদি এসব কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন, আমি বলতে চাই যে, হয়তো ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব না প্রয়োজনে তার আগেও যারা যারা এই সমস্ত কাজ করছে গঠনতন্ত্রবিরোধী, আমরা তাদের শোকজ করব। ড. কামাল হোসেনের ব্যাপারেও এটার কোনো ব্যত্যয় হবে না। উনি সভাপতি হোক বা আরেকজন সদস্যই হোক, উনি যদি গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন তার ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নিতে হয় আমাদের গঠনতন্ত্রেই আছে কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিক্রমে তাকে বহিষ্কার করা যায়। তার আগে শোকজ দিতে হয়। এটাই গঠনতন্ত্রের বিধান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে; কিন্তু উনি এখনো ড. রেজা কিবরিয়ার যোগসাজশে গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন সে জন্য এই প্রক্রিয়া আগেও হতে পারে। সেটি আমরা দেখব আগামীকাল থেকে উনি (ড. কামাল হোসেন) কী ভূমিকা রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণফোরামের রক্ষার প্রত্যয়’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মোস্তফা মহসিন মন্টু, আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিককে দল থেকে বহিষ্কার করে। তারা ১২ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের দিন ঘোষণা করে।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরামের বিদ্রোহী অংশ জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্ধিত সভা করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মহসিন রশিদ, আওম শফিকউল্লাহ ও মোশতাক হোসেনকে বহিষ্কার করে। তারা ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন বলেন, ড. রেজা কিবরিয়া ও মুকাব্বির খানÑ এই দু’ইজনই কিন্তু বিদেশভিত্তিক রাজনীতি করেন। রেজা কিবরিয়ার মাটি ও মানুষের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। মুকাব্বির সাহেব বিদেশে থাকেন, মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন, একটা সংগঠনও নেই তার নির্বাচনী এলাকায়।
২০১৮ সালের নির্বাচনের ছয দিন আগে দেশে এসে নির্বাচনটা করে উনি একটা অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন। সুলতান মো: মনসুরও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ২৭ বছর দলের ভেতরে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নেই। উনি (ড. কামাল হোসেন) ২৭ বছর ধরে সভাপতি। এর ভেতরে আমরা পাঁচ-ছয়জন কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক সাহেব সেক্রেটারি হয়েছেন, আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব সেক্রেটারি ছিলেন, সুব্রত দা অন্তর্বর্তীকালীন সেক্রেটারি ছিলেন, প্রকৌশলী আবুল কাশেম সাহেব ছিলেনÑ তারপরে আমি হলাম, আমরা সবাই নির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেল হয়েছি। আর উনি একটানা সভাপতি। উনি বলেন, আমি ছেড়ে দেবো; কিন্তু পদ ছাড়েননি।
তিনি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক দলে গণতন্ত্র চর্চা থাকতে হবে। দলের কার্যক্রম হবে পার্টি অফিসে, কোনো ব্যক্তির চেম্বার কিংবা বাসায় নয়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, চেম্বার থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে হতো। কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং গত ১৮ মাসের মধ্যে একটাও হয় নেই। এটা তো গণতন্ত্র চর্চা বলে না। তিন মাস পর পর মিটিং করার বিধান। রেজা কিবরিয়ার সদস্য পদপ্রাপ্তির সাথে সাথে সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি অগঠনতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেন মন্টু।
দলের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ড. কামাল হোসেনকে একটা বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে গেছে। বলতে পারেন উনার স্মৃতি বিভ্রান্তির কারণে তাকে দিয়ে বারবার গণতান্ত্রিক বিপর্যয় ঢেকে নিয়ে এসেছে। আমরা তাকে অনুরোধ করতে চাই, উনি সম্মানিত ব্যক্তি। জাতির এই সঙ্কটে উনি জাতির বিবেক ও অভিভাবক হিসেবে আমরা তাকে দেখতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, খান সিদ্দিুকর রহমান, আইয়ুব খান ফারুক, আতাউর রহমান, হাসিব চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, লতিফুল বারী হামিন, নাসির হোসেন, রওশন ইয়াজদানি, তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান বুলু, মাওলানা নাজিম উদ্দিন আজহারি, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, নীলুফার রহমান শাপলা, সানজিদ রহমান শুভ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা