২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বেনাপোল কাস্টমসে ১৭১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়

-

রাজস্ব ফাঁকি রোধে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ব্যাপক সংস্কার হওয়ায় গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ১৭১ কোটি টাকার রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতিশীলতা, দ্রুত পণ্য খালাস ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠকে কঠোর অবস্থানের কথা জানান বেনাপোল কাস্টমস হাউজের নবাগত কমিশনার আজিজুর রহমান।
কাস্টমস সূত্র জানায়, রাজস্ব ফাঁকির সাথে জড়িত আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের পণ্য চালান শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর যাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির কোনো অভিযোগ নেই তাদের পণ্যচালান ‘ডি’ মার্কের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই খালাস দেয়া হবে।
কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যচালান কেমিক্যাল ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফলাফলের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে খালাশ দেয়া শুরু হয়েছে। বন্দরে ওয়েইং স্কেলের ওজনের ভিত্তিতে পণ্যের শুল্কায়নের বিষয়ে বলা হয়, বন্দরের স্কেলগুলোতে এক-একটির ওজন এক এক রকম হওয়ায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এটি অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া হবে, এটিকে পুঁজি করে কেউ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে বেনাপোল বন্দর দিয়ে সাইড ডোর রেল কার্গো কনটেইনার কার্গো চালু হয়েছে। সেই সাথে রেল টার্মিনাল ইয়ার্ড তৈরিরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্থলপথে যেখানে প্রতিদিন ৫-৬ শ’ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো বেনাপোল বন্দর দিয়ে, সেখানে বর্তমানে করোনার প্রভাব থাকলেও প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক মালামাল আমদানি হচ্ছে।
ওপারে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় কালিতলা পার্কিংয়ে আমদানি পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে ২০০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে জোর করে। দু’দেশের ব্যবসায়ীরা ওপারে বনগাঁও এলাকায় একটি অশুভ, অপশক্তি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় কাস্টমস কমিশনারের কাছে। যদিও বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে ভারতের সাথে। তবুও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চলতি অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জন্য ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেনাপোল-যশোর হাইওয়ে ছয় লেন ও বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে বেনাপোল বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড ট্রেন চালু, আইসিডি চালুসহ বাইপাস সড়ক চার লেন করার জোর দাবি জানানো হয়।
কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত ৯৯৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে; যা গতবারের একই সময়ের চেয়ে ১৭১ কোটি টাকার বেশি। শতকরা হারে ২০.৬৭ শতাংশ বেশি। একই সময়ে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল বেনাপোল কাস্টমস হাউজে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সুজন জানান, নতুন কমিশনার আজিজুর রহমান বেনাপোলে যোগদানের পর থেকে রাজস্ব ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে। তবে আগের তুলনায় হয়রানি একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। পরীক্ষাসহ শুল্কায়নে হয়রানির প্রতিবাদে কয়েক দিন শুল্কায়নের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। হয়রানি বন্ধ করা হবে কমিশনারের এ ধরনের আশ্বাসে কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়। কিন্তু বেনাপোলের মতো অন্যান্য বন্দরে কড়াকড়ি না থাকায় আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে মাল আমদানি করছেন। ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নিচ্ছেন। কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ফাঁকি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্য চালানে অনিয়ম পাওয়ায় ২০০ পারসেন্ট জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement