২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আওয়ামী লীগের খুলনা জেলার প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে দলের একাংশের অভিযোগ

অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত অরাজনৈতিক আত্মীয়দের পদ দেয়া হয়েছে

-

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দলের কেন্দ্রে পাঠানো কমিটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়। কিন্তু তা প্রকাশ হয়ে পড়ায় খসড়া তালিকা নিয়ে নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দলের কেন্দ্রে এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পরিবারের সদস্য, অতীতে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকা ব্যক্তি, রাজাকারপুত্র এবং অতীতে দলের কোনো কমিটিতে না থাকলেও অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে নতুন কমিটিতে অনেককে পদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। খসড়া কমিটি থেকে বাদ পড়া সাবেক জেলা কমিটির ১৩ জন সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মহানগর ও জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য কেন্দ্র ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে মহানগর কমিটি কেন্দ্রে তালিকা পাঠালেও জেলা কমিটি পারেনি। জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ কুমার অধিকারী কমিটির তালিকা প্রণয়নে একমত হতে না পারায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর তারা পৃথক পৃথক কমিটি নিয়ে ঢাকায় যান। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা এমপি দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ কুমার অধিকারীকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। মূলত সমঝোতার জন্য আয়োজিত সে বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে আর একটি বৈঠকে কমিটির একটি খসড়া করা হয়। সে খসড়ায় জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ কুমার অধিকারী স্বাক্ষর করেন। এরপর এ খসড়া কমিটির সদস্যদের নাম জানাজানি হলে গত ২১ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুলসহ খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া সাবেক কমিটির ১৩ জন সদস্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তারা অভিযোগ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদের স্ত্রী মেহের নিগার স্বপ্নাকে সদস্য করা হয়েছে। অথচ তাকে কখনোই রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায়নি।
খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ কুমার অধিকারী এ ব্যাপারে বলেন, পদপ্রত্যাশী অনেকে পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক কথা বলতে পারেন। তবে অর্থের বিনিময়ে কাউকে পদ দেয়া হয়নি। যারা এ ধরনের অভিযোগ তুলছেন তারাও কতটা স্বচ্ছ সেটাও দেখতে হবে। আমরা কেন্দ্রের কাছে কমিটি জমা দিয়েছি। তারাই যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণা করবেন।
জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, দলের জেলা কমিটিতে রাজাকার পরিবারের সদস্য, বিতর্কিত ব্যক্তি ও হাইব্রিডদের স্থান হবে না। যারা বাদ পড়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আমার স্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে গত ৪০ বছর ধরে আছেন, তাদের রান্নাবান্না করে খাইয়েছেন। এটা কম কিসের। আর অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ সত্য নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement