২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চসিক পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায় সুজন

বেনিফিশিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পৃক্ত হলে চট্টগ্রাম বিশ্বমানে উন্নীত হতে বাধা থাকবে না

-

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রাম ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নগরী। এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। নগরীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন সত্যিকার অর্থে নানান আর্থিক সঙ্কটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এটাও সত্য যে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ এই নগরীর জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সব প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবা খাতের কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি গতকাল শনিবার টাইগারপাসে চসিক সম্মেলন কক্ষে নান্দনিক, পরিবেশবান্ধব ও উন্নত চট্টগ্রাম নগরী গড়ার লক্ষ্যে চসিক প্রশাসক কর্তৃক গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায় এসব কথা বলেন। চসিক প্রশাসক ভৌগোলিক শহর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ার হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নাম উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর ওপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সড়কগুলোর ধারণক্ষমতা পাঁচটন; কিন্তু ইপিজেড ও বন্দরকেন্দ্রিক পরিবহনগুলো ১০-১৫ টনের বেশি মালামাল বহন করে থাকে। তাদের পরিবহনগুলোর বাড়তি চাপে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সড়ককাঠামো উন্নয়নে তাদেরও একটি অংশগ্রহণ থাকা বাঞ্ছনীয়।
পরামর্শক কমিটির প্রধান সাবেক মুখ্য সচিব ও পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল করিম বলেন, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত আছে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন থেকে যে ম্যাচিং ফান্ড দিতে হয় তা কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি থোক বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
কমিটির সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন ঠিকাদার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণকালীন পাওনা বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ ছিল। আগের মেয়রের সময়ের এই দেনাগুলো আমি পরিশোধ করেছি। চলমান উন্নয়নকাজ প্রক্রিয়ায় দেনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এর সমাধান হতে হলে সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওনাগুলো যাতে আদায় হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান তৈরি করে দিতে হবে। কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সিটি গভর্মেন্ট গঠন ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সার্বিক কর্তৃত্ব অর্জন অসম্ভব। কারণ চট্টগ্রামের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সব সেবার সংস্থার সমন্বয়ের নেতৃত্ব সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়রের হাতে না থাকলে তিনি হবেন ঠুঁটো জগন্নাথ।
সভায় পরামর্শক কমিটির সদস্যদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, নৌ-বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমডোর জোবায়ের আহমেদ, বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম, শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর গৌতম বুদ্ধ দাশ, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি প্রবীর কুমার সেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো: মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেনÑ চসিক সচিব মোহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ পিএসসি, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো: মুফিদুল আলম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: সেলিম আকতার চৌধুরী, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীসহ চসিকের অন্যান্য কর্মকর্তা।

 


আরো সংবাদ



premium cement