জলাতঙ্কের টিকার চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে তবে মৃত্যুও কমেছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
জলাতঙ্ক রোগের টিকার চাহিদা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে, তবে এই রোগে গত এক দশকে মৃত্যুও কমেছে কয়েক গুণ। কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২০০৯ সালে ১৪৮ ব্যক্তির মৃত্যু হলেও এক দশক পর ২০১৮ সালে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। মৃত্যুর সংখ্যা ৬৮ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা: শাহনীলা ফেরদৌসী। তিনি জানান, টিকার মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ হয় এই সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সারা দেশে ৬৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিনের (জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা) চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ২০১২ সালে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি রোগী বিনামূল্যে টিকা পেয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪০৯ জনে উন্নীত হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সারা দেশে প্রায় তিন লাখ ভ্যাকসিন দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে সাফল্য বেশ সন্তোষজনক হলেও জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ।
উল্লেখ্য, জলাতঙ্ক একটি মারণব্যাধি। এই রোগটি প্রাণী থেকে মানুষে ও প্রাণীতে সংক্রমিত হতে পারে। মূলত কুকুরের মাধ্যমে এ রোগটি সংক্রমিত হয়। এখনো বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং বছরে ৫৫ হাজার মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে কুকুরের কামড়জনিত জলাতঙ্কের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশ এসডিজিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। সে কারণে একই সময়ে বাংলাদেশকেও জলাতঙ্কের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। ফ্রান্সের বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর আবিষ্কার করেছিলেন জলাতঙ্কের টিকা। এ টিকার প্রয়োগের ফলে জলাতঙ্ক রোগটি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এই বিজ্ঞানীর মৃত্যু দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক নির্মূলে টিকাদান, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান’।
কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর আঁচড়, কামড়ের পর টিকা দিলে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ হয়। কিন্তু দেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূল করতে হলে প্রয়োজন কুকুরকেই জলাতঙ্ক থেকে নিরাপদ করা। এ ব্যাপারে ভাইরোলজিস্টরা বলেন, কোনো এলাকার ৭০ শতাংশ কুকুরকে জলাতঙ্কের ভাইরাস প্রতিরোধে টিকার আওতায় আনা হলে ওই এলাকার কুকুরের জলাতঙ্কের জন্য ভাইরাসটি থাকবে না। তিন বছর পরপর তিন রাউন্ড টিকা দিলে কুকুর থেকে মানুষ বা কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে সংক্রমণের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসে বলে জানান অধ্যাপক শাহনীলা ফেরদৌসী।
তিনি আরো জানান, বিশ্বব্যাপী জলাতঙ্ক নির্মূলে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে জলাতঙ্ক রোগটি একজনের কমে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা কাজ করছে।
জলাতঙ্ক নির্মূলে ব্যাপকহারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী ব্যাপকহারে কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলা সদর পৌরসভা ও ১০টি সিটি করপোরেশন এবং ৬০ জেলার সব উপজেলায় প্রথম রাউন্ড টিকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, পাবনা, নীলফামারী জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ড এবং সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলায় তৃতীয় রাউন্ড টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩০টি কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চার জেলায় প্রথম রাউন্ড ও ১৬ জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ডে পাঁচ লাখ কুকুরকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা