২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধনাঢ্য পাত্রই ছিল সাদিয়ার টার্গেট

-

পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার ক্ষেত্রে ধনাঢ্য ছেলেদেরই টার্গেট করত সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস। নিজে কখনোই কানাডায় যায়নি। কিন্তু পরিচয় হাঁকাত কানাডিয়ান। তার পোশাক-আশাক এবং কথাবার্তায় আধুনিকতার ছাপ থাকায় লোকজন সহজেই বিশ^াস করতেন। আর সেই বিশ^াসের সুযোগ নিয়েই লোকজনদের ফাঁদে ফেলত সাদিয়া। প্রতারণার কৌশল হিসেবে পাত্রদের সাথে কথা বলার জন্য পৃথক সিম কার্ড ব্যবহার করত। টার্গেট করা পাত্রের সাথে কথা বলা ও প্রতারণা শেষ হওয়ার পরই ওই সিমটি ফেলে দিতো। সিআইডি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারণার ক্ষেত্রে সাদিয়া নানা কলাকৌশল অবলম্বন করত। কখনো অবিবাহিত যুবক, কখনো বিপতœীক, কখনো তালাকপ্রাপ্ত, কখনো নামাজি আবার কখনো বয়স্ক পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতো সাদিয়া। যে পাত্রের জন্য যেমন পাত্রী দরকার তেমন রূপেই নিজেকে উপস্থাপন করত।
জানা গেছে, সাদিয়া টার্গেটকৃত পাত্রের সাথে গুলশান-বনানীর অভিজাত রেস্টুরেন্টে দেখা করত। পাত্রকে পছন্দের কথা জানাত। কানাডায় তার দুই শ’ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে, এমন বানোয়াট গল্প শোনাত। মিথ্যে স্বপ্ন দেখাত। বিয়ের পরই কানাডায় নিয়ে যাবে- এমন স্বপ্ন দেখিয়ে পাসপোর্ট নিতো। ভিসাসহ কানাডায় যেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করার নামে প্রথমে এক-দুই লাখ টাকা দাবি করত। আগ্রহী ব্যক্তি সহজেই বিশ্বাস করে পাসপোর্ট ও টাকা তুলে দিতেন তার কাছে। এর পর নানাভাবে দফায় দফায় লাখ লাখ হাতিয়ে নিতো। এভাবে গত প্রায় ১০ বছর ধরে শতাধিক লোকের সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাদিয়া।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে সাদিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি। রিমান্ডে থাকা সাদিয়া সিআইডিকে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তবে প্রতারক চক্রের মূল হোতা সাদিয়ার স্বামীসহ আরো চার সদস্য এখনো পলাতক।
জানা গেছে, সাদিয়া প্রতারণার জাল ফেলতে পত্রিকায়ও বিজ্ঞাপন দিতো। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করত, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন পাত্রীর জন্য পাত্র প্রয়োজন। পাত্রীর উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। বয়স ৩৭ বছর। কানাডায় তার ব্যবসা রয়েছে। নামাজি পাত্রীর ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্রকে যোগাযোগ করতে বলা হতো। যোগাযোগের জন্য সাদিয়ার মোবাইল ফোন নম্বরও দেয়া হতো বিজ্ঞাপনে।
পাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিতে ডায়েরি ব্যবহার করত সাদিয়া। কে কখন কত টাকা দিয়েছে সব লিখে রাখত। এরপর নিতো পাত্রদের পাসপোর্টসহ বিভিন্ন কাগজপত্র। যা তার বাসা থেকেই উদ্ধার হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, সাদিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরি, মোবাইল ফোন ও সিম কার্ডেই মিলেছে শতাধিক পাত্রের তথ্য। ইতোমধ্যে তদন্তের প্রয়োজনে ওই সব ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে সিআইডি। পাশাপাশি সাদিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার প্রতারণার কৌশল ও প্রতারক চক্রের বাকি সদস্যদের বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করছে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে তার বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে বিভিন্ন পাত্রের নাম পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে সেই হিসাবও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পাত্র হিসেবে যাদের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের বিষয়েও আলাদা হিসাবের তথ্য মিলেছে। ডায়েরিতে মাত্র দু’বছরের, অর্থাৎ ২০১৫ ও ২০১৬ সালের প্রতারণার কাহিনী লেখা রয়েছে। তাতেই দুই শতাধিক মানুষের নাম রয়েছে, যাদের প্রত্যেককে বিয়ের পর কানাডায় নেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল এবং মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সিআইডি বলছে, শুধু দুই বছরের হিসাব থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, সাদিয়ার সাত-আট বছরের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে শত শত মানুষ। চক্রে রয়েছে তার দ্বিতীয় স্বামী এনামুল হাসান ওরফে জিহাদ, শাহরিয়ার, ফারজানা ও আবু সুফিয়ান। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার সাংবাদিকদের বলেন, রিমান্ডের প্রথম দিনে সাদিয়া ঠিকমতো কথা বলেনি। অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তারপরও তার কাছ থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন আলামত বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। যেগুলো যাচাইয়ের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, সাদিয়ার প্রতারণার অন্যতম সহযোগী তার দ্বিতীয় স্বামীসহ অন্তত আরো চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement