১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এস্টেরিক্স জাতের বীজআলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট বিপাকে কৃষক

-

নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই সাধারণত আলু চাষের কাজ শুরু করে দেন চাষিরা। কিন্তু সেই কাজে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আলু বীজের দাম। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এস্টেরিক্স জাতের বীজ-আলুর কয়েকজন আমদানিকারক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বীজ-আলুর দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এ ছাড়া সার, কীটনাশক ও মজুরি খরচও যে হারে বাড়ছে, তাতে আলু চাষে আদৌ লাভ হবে কি না আশঙ্কা করছেন ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার কয়েকজন আলুচাষি।
জানা যায়, অন্যান্য বছরগুলোতে মৌসুম শুরুর আগেই আলু বিক্রির টাকা এসেছিল কৃষকের ঘরে। যখন ধানের দাম না পেয়ে কৃষকের বিবর্ণ মুখ দেখা যায়, ঠিক তখন উল্টো ছবি দেখা গেছে আগাম চাষিদের ক্ষেত্রে। গ্রানোলা, কাঠিলাল, এস্টেরিক্স, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন জাতের আগাম আলু চাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা। এবার তারা আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কয়েকজন কৃষকের অভিযোগ, আগাম জাতের আলু বীজের অন্যতম হচ্ছে, এস্টেরিক্স আলুবীজ, যা নেদারল্যান্ডসের এইচজেডপিসি (ঐতচঈ) কোম্পানি থেকে আমদানি হয়। বর্তমানে এই জাতের আলুর বীজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে মাত্র ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান আমদানি করছে। যাদের মধ্যে মেসার্স নাবিলা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ব্লু মুন ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স সততা ট্রেডার্স, মেসার্স রতœা এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠান খরচসহ আমদানিকৃত আলুবীজ আমদানি মূল্যের দুই বা তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো: মোশারফ হোসেন উল্লিখিত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষিমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক, ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো: মোশারফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে এস্টেরিক্স জাতের আলুর বীজ ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান নেদারল্যান্ডস এইচজেডপিসি (ঐতচঈ) থেকে আমদানি করছে। যার আমদানি খরচ ৫০ কেজির বাক্সপ্রতি সর্বোচ্চ ৪,০০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ অসাধু মুনাফালোভী আমদানিকারকগণ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাক্সপতি ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা দরে আলুবীজ বিক্রি করছে। যা ক্রয় করা সাধারণ কৃষকদের সাধ্যের বাইরে। এর ফলে কৃষকের আলু উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এ কারণে এই জাতের আলু চাষ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে ও ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে এবং কৃষকরা উৎসাহ হারাচ্ছেন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে গত ৯ সেপ্টেম্বর কৃষিমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার স্মারক নং বিসিএসএ/৪৯/৪৭৬(৬)/২০২০। তিনি তার আবেদনে এস্টেরিক প্রজাতির বীজআলু সরকারিভাবে আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকদের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিতরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন । মুন্সীগঞ্জের মোক্তার ুরের আলুচাষি মো: দেলোয়ার হোসেন মেম্বার এই প্রতিবেদককে জানান, আলু বীজের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এ ছাড়া সার, কীটনাশক, সেচÑ এসবের খরচ গত বছরের চেয়ে বেড়েছে বিঘাপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় এবার খরচ পড়বে বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা।
আমদানিকারক মেসার্স রতœা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: মনির হোসেন মোল্লা বলেন, বাংলাদেশে হল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত এস্টেরিক্স জাতের বীজআলুর চাহিদা রয়েছে ত্রিশ হাজার বাক্স। প্রতি বাক্সে ৫০ কেজি আলুবীজ থাকে। এবার হল্যান্ডে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বীজ-আলু দিতে পারছেন না। যে কারণে বীজের ঘাটতি রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের চেয়ে রংপুর দিনাজপুর জেলায় এই জাতীয় বীজ আলুর চাহিদা বেশি। মনির বলেন, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো: মোশারফ হোসেন যিনি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি আমার কাছে বীজ চেয়েছিলেন। এ বছর আমি মাত্র এক কনটেইনার (৫শত বাক্স) আমদানি করতে পেরেছি। বীজ কম থাকায় তাকে দিতে পারিনি তাই তিনি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। আসলে বিষয়টি তেমন জটিল কিছু নয়।
এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য ওপেন মার্কেট। এখানে বীজ বিক্রির ব্যাপারে কারো সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই। যদি হল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত এস্টেরিক্স জাতের আলুর বীজ সিন্ডিকেট করে কেউ বিক্রি করে তাহলে আমরা পরিচালক (বীজ) প্রত্যয়ন এজেন্সি, গাজীপুরের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। তিনি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো: মোশারফ হোসেনের আবেদন এখনো আমার দফতরে আসেনি। আবেদন দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হল্যান্ড থেকে এস্টেরিক্স বীজ-আলুর আমদানি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তিনি এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, যদি কোনো আমদানিকারক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি মুনাফা অর্জন করতে চায় তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল