২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে ছাত্রদল

কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের এক বছর
-

দীর্ঘ ২৯ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি এক বছর পার করল। এই এক বছরের মধ্যে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যাচ্ছে ছাত্রদলের সাংগঠনিক টিম। করোনার মধ্যেও ছাত্রদলের দশটি বিভাগীয় টিম নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সংগঠনের তৃণমূলে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। বহুদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন নেতৃত্বে একেরপর এক ঘোষণা হচ্ছে। ছাত্রদলের খোকন-শ্যামল নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ইতোমধ্যে সারা দেশের প্রায় ৫ শতাধিক (থানা, পৌর ও কলেজ) কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও পূর্ব ছাত্রদলের অধীনস্থ ৬২টি (ওয়ার্ড) কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ছোটোখাট অনিয়ম থাকলেও তৃণমূল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের খুশির অন্ত নেই। এ দিকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ‘আংশিক’ কমিটি। পদবঞ্চিত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এবারের আংশিক কমিটিতে মূল্যায়ণ করা হবে। নতুন এই আংশিক কমিটির আকার হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট।
উল্লেখ্য, নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। এতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি ও ইকবাল হোসেন শ্যামল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। নবনির্বাচিত নেতৃদ্বয় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, যতদ্রুত সম্ভব তারা কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমিটি পুনর্গঠন করবেন। তবে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের এক বছর পূর্ণ হলেও প্রতিশ্রুতির পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রদলের ৬০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি এবং ২১ মার্চ ২০২০ সালে বিশ^বিদ্যালয়ের ১২টি হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এখনো আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদল।
অবশ্য ছাত্রদল তৃণমূল পুনর্গঠনে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। সারা দেশে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের জন্য ১০টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছাত্রদলকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে সারা দেশ সফর করছেন। তারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলছেন। এরপর কেন্দ্রে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এখন সেই প্রতিবেদনের আলোকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সহাবস্থান নেয়াটা ছিল অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। একাধিকবার মার খাওয়ার পর ছাত্রদল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এখন বেশ সক্রিয়। এর মধ্যে ছাত্রদল সারা দেশের তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে অক্লান্ত কাজ করছে। সব উপজেলা ও ইউনিটে সম্মেলন শেষ করে নতুনভাবে কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর ছাত্রদলকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানাভাবে কাজ করছি। ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলায় কর্মিসভা করেছি। করোনার মধ্যেও সারা দেশের প্রায় ৫০০টি ইউনিট/শাখা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা চলমান প্রক্রিয়া। তা ছাড়া করোনাকালে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির এক বছর পূর্তি উপলক্ষে নতুন প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করা হবে। আগামীকাল রোববার সারা দেশের ৫ জেলায় একসাথে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে খোকন বলেন, এই এক বছরে তারা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা নানাভাবে হয়রানি ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়েছে। তবুও আমি ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে ভাগ্যবান এবং গর্বিত যে আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান, যিনি আমাদেরকে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আজকে তার মতো পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার বিরুদ্ধে সরকারের আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা। ইনশা আল্লাহ ছাত্রদল অতীতের চেয়ে আরো বেশি সুসংগঠিত হবে। আগামী দিনে আমাদের অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনাটাই অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে জানান খোকন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি আগের মতো বিরাট সংখ্যা দিয়ে করার চিন্তা থেকে সরে এসেছে দলের হাইকমান্ড। বরং ধাপে ধাপে আংশিক তথা স্বল্পসংখ্যক নেতাদের পদায়ন করতে চাইছে দলটি। এতে করে বিরোধের আশঙ্কা থাকবে না বলে তারা মনে করেন। এ দিকে শীর্ষ নেতাদের পেছনে পদের আশায় দিনের পর দিন পার করছেন বহু ছাত্রনেতা। তারা দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করার দাবি জানান। অবশ্য ঢাবি আহ্বায়ক কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ।
ছাত্রদলের তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মী জানান, পদের আশায় যদি দিনের পর দিন ঘুরতে থাকি তবে রাজনীতিটা করব কখন? তাদের অভিযোগ বিএনপি ক্ষমতায় নেই এক যুগের বেশি সময় ধরে। এই দুঃসময়ে যারা বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি করে তারাই প্রকৃত সৈনিক। দলকে মাঠপর্যায়ে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে হলে প্রকৃত ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীদের দিয়েই কমিটি গঠন করা এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেয়া উচিত। পদবঞ্চিত ও পদপ্রত্যাশী ছাত্রদলের নেতাদের দাবি বিএনপির হাইকমান্ডের উচিত খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্রদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করা। তা না হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মুক্ত করার আন্দোলন ফলপ্রসূ হবে না।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতারাও টিএসসিতে এবং নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। সংগঠনের সাবেক ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ব্যাপারে সবসময় তৃণমূলের পদপ্রত্যাশীদের একটা চাপ রয়েছে। এ নিয়েও কাজ চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement