২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বকে কবর দিতেই ২১ আগস্টের চক্রান্ত: গয়েশ্বর রায়

নয়াপল্টনে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি মরহুম আব্দুল মান্নানের স্মরণ সভা: নয়া দিগন্ত -

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ২১ আগস্টের ঘটনা শেখ হাসিনাকে মারার বড় চক্রান্তÑ এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। যদি থাকে এই চক্রান্ত ছিল সেদিন জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বের কবর দেয়া। এটা একটা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বিএনপির ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ২১ আগস্টের ওই ঘটনার প্রকৃত দোষীরা এখনো বেঁচে আছে, নিরাপদে বেঁচে আছে এবং ভালো আছে। তারা দেশে আছে, দেশের বাইরেও আছে। তা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কারো অজানা থাকার কোনো কারণ নাই। সেটা দেশী-বিদেশী গোয়েন্দারা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে এটা তাদের নখদর্পণের থাকার কথা। যেহেত্ ুএটা একটি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ব্যাপার সেই কারণে আসল ঘটনা কখনো আলোর মুখ দেখবে না।
গয়েশ্বর বলেন, এই যে রং অ্যাপ্লিকেশন পলিটিক্সে মিথ্যা দিয়ে সত্যকে চাপা দেয়া, দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে সামগ্রিক রাজনীতিকে দুর্ঘটনায় ফেলা। ২১ আগস্ট এই রকম ঘটনা ১/১১ ‘র কোনো রি-এজেমেন্ট হতে পারে। এই যে ১/১১ টা আসছে সরকারে। ১/১১-এ কে ভিকটিম হয়েছে? বিএনপি হইছে, খালেদা জিয়া হইছে। ১/১১-এ লাভবান হয়েছে কে? হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ। তাহলে ডাউট অব দ্য বেনিফিসারি যদি বলা হয় ১/১১ এর মাধ্যমে বেনিফিট হয়েছে বিএনপির অতি মুখোমুখি প্রতিপক্ষ। ২১ আগস্টের ঘটনার দিনটি ‘ভালো দিন নয়’ অভিহিত করে ওই সময়ে সেপ্টেম্বরে ভারতীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারের বক্তব্য উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, এই দিনটি কোনো ভালো দিন আমি বলি না। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই কারো জন্য কাম্য নয়। ২০০ ওপরে আসন দিয়ে তখন বিএনপি ক্ষমতাসীন। একটা স্টেবল গভর্মেন্ট ক্ষমতাসীন সরকার কখনোই চাইবে না সেই সরকারকে আনস্টেবল করতে। ২১ আগস্টের ঘটনাটা রাষ্ট্রকে আনস্টেবল করা, উসকানি দেয়া, সুরসুরি দেয়া অর্থাৎ সরকারকে বিব্রত করা দেশে-বিদেশে সকল ক্ষেত্রে।
এটা যদি প্রতিষ্ঠিত হতো, এটা যদি জনগণ বিশ্বাস করতে পারত যে, এটা সরকার করেছে অথবা খালেদা জিয়া করেছে বা তারেক রহমান করেছে। তাহলে সেদিন সরকার থাকার কথা না। তখন একটা পাতা নড়ে নাই, একটা আওয়াজ হয় নাই। বিশ্ব শক্তি বুঝত যে, পিপলস হেজ দ্যাট এক্সসেপটেড দিস ওকারেন্স। অর্থাৎ এটা জনগণের মাঝে বুঝা হয়ে গেছে যে, এই অপকর্ম সরকার করতে পারে না, একটা গণতান্ত্রিক সরকার করতে পারে না, এটা একটা রেন্সপনসেবল গভর্মেন্ট কোনো মতেই করতে পারে নাÑ এটাই আমি ভারতীয় টেলিভিশনে সেদিন বলছিলাম। ক্ষমতায় থাকাকালে নিজ সরকারের ভুল-ভ্রান্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সরকারে থাকতে ভুল-ভ্রান্তি আমাদের কিছু ছিল। যার খেসারত আজকে জনগণ দিচ্ছে, আজকে আমরা দিচ্ছি, খেসারত তারেক রহমান দিচ্ছে, খেসারত খালেদা জিয়া দিচ্ছে।
‘এটা আওয়ামী লীগের মাস্টারপ্ল্যান’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা ২১ আগস্টের ঘটনাকে অবশ্যই বলি এটা মর্মান্তিক। যারাই করুক তারা দুরাচার, তারা দুর্বৃত্ত। ওই ঘটনার সাথে বিএনপিকে জড়ানো, তারেক রহমানকে জড়ানোÑ তখনই বুঝা যায় এটা একটা মাস্টারপ্ল্যান। এই মাস্টারপ্ল্যান শেখ হাসিনা জানতেন। তারেক রহমান জড়িত প্রধানমন্ত্রীর এ রকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ওই ঘটনার সাথে যদি তারেক রহমান জড়িত হয় তাহলে আপনাদের আন্দোলনের ফসল মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনরা চার্জশিটে দেয়নি কেন? আপনাকে এসে দিতে হলো রাষ্ট্রক্ষমতা কবজা করে আইন-আদালত কবজা করে তার নাম যুক্ত করতে হয়েছে। তাতে কী প্রমাণিত হয় না যে, এই মামলায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম প্রতিহিংসায় দেয়া হয়েছে, আক্রোশবশত দেয়া হয়েছে। রিজভী বলেন, আপনি তারেক রহমানকে জড়িত করেছেন রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে সাক্ষীকে জোর করে, টর্চার করে, পিটিয়ে উৎপীড়ন করে। আপনি সাক্ষীদের মুখ দিয়ে এসব কথা বলিয়েছেন। সেই মুফতি হান্নান আবারো ১৬৪ করে সেখানে তার ওপর টর্চার যেটা করা হয়েছে তার বর্ণনাও আছে। কিভাবে আঙুলের নখ তোলা হয়েছে, পায়ের নখ তোলা হয়েছে এভাবে টর্চার করে তার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছিল। এটাও কিন্তু আদালতে আমলে নেয়া হয়নি।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে মরহুম আবদুল মান্নানের স্মরণে এই আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল হয়। আলোচনা সভা শেষে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেসারুল হক। গত ৪ আগস্ট রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান।
জেলা সভাপতি দেওয়ান মো: সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, ধামরাই জেলা চেয়ারম্যান তমিজউদ্দিন আহমেদ ও মরহুম নেতার একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement