২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই

ব্রির গবেষণা প্রতিবেদন
-

দেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। বরং নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরও ৫ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এ ছাড়া নভেম্বরের মধ্যে দেশের ফুড বাস্কেটে নতুনভাবে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হবে। ব্রির সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নভেম্বর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫০ কোটি মানুষের চাহিদা মিটানোর পরেও ৩৬-৭৮ দিনের চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।
ব্রির গবেষণায় দেখা যায় চালের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপর পক্ষে ডিএইর ক্রপ কাটের তথ্য অনুযায়ী ৩.১৮ শতাংশ এবং ব্রির ক্রপ কাট অনুযায়ী ৩.৯৪ শতাংশ চালের উৎপাদন বেড়েছে। বোরো মওসুমে এ বছর চালের উৎপাদন হয়েছে ২০.২৬ মিলিয়ন টন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৮ শতাংশ বেশি। এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভালো আবহাওয়া, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা, দাম কমানোর ফলে ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্রির-ডিএই যৌথ উদ্যোগে ১৪টি কৃষি অঞ্চলে আঞ্চলিক কর্মশালা, বোরো মওসুমের শুরুতে কৃষক প্রশিক্ষণ এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকারের পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
ব্রি মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এগুলোর মধ্যে হাওরের ধান কর্তনে শ্রমিক ও যান্ত্রিকীকরণের ভূমিকা, সুপার-সাইক্লোন আমফানের প্রভাব নিরূপণ, ধান চালের মজুদ পরিস্থিতি এবং বাজারমূল্যে এর প্রভাব, ৬৪ জেলায় মাঠের ফসল কর্তন এবং আউশ আবাদ পরিস্থিতি নিয়ে র্যাপিড সার্ভের মাধ্যমে করোনার সময়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
এসব গবেষণার ফলন বিশ্লেষণে ৬৪টি জেলায় ব্রি কর্তৃক ১ হাজার ৪৮টি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৬৯টি ফসল কর্তনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই সার্ভে কার্যক্রমে দেশের ৩৮টি জেলার ৫৭টি উপজেলা এবং ফসল কর্তনে ৬৪টি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গবেষণা বলছে, এ বছর বোরো ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষক আউশ চাষে ঝুঁকেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ ভাগ বেশি জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। আউশের প্রত্যাশিত উৎপাদন হবে ৩.৫৬ মিলিয়ন টন। কিন্তু ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৩১টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই আউশের প্রত্যাশিত উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির জরিপ ফলাফলে দেখা গেছে, ফলন, আবাদকৃত এলাকা, উৎপাদন ও চালের অভ্যন্তরীণ মজুদ পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এ বছর সব কৃষি অঞ্চলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ বৃদ্ধির হার সারা দেশে গড়ে শতকরা ৮.৪ ভাগ। ব্রি গবেষণায় বলছে, করোনায়ও দেশে চাল উৎপাদন বেড়েছে। গত দশ বছরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১০ সালে যেখানে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চতুর্থ, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। যা দেশের জন্য বড় ধরনের অর্জন। একই সাথে খাদ্যনিরাপত্তায়।
এ ছাড়া গত দুই বছর ধানের দাম ক্রমাগত হারে কম থাকায় এ বছর বোরো আবাদি জমির পরিমাণ কিছুটা কমেছে, যা গত বছরের তুলনায় শতকরা ০.৭১ ভাগ। অন্য দিকে এ বছর বোরো ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষক আউশ চাষে ঝুঁকেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ ভাগ বেশি জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে।
অন্য দিকে বিসিআর হিসেবে দেখা গেছে, এবার বোরো ধান চাষ লাভজনক ছিল। ধানকাটা মৌসুমে কাঁচা ধানের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি থাকায় কৃষকের মোট আয় শতকরা ১৬.৭ ভাগ বেড়েছে। বোরো চাষিদের তথ্য মতে, এ বছর তারা গড়ে বিঘাপ্রতি ১ হাজার ৬০৪ টাকা লাভ করেছেন, যেখানে গত বছর তাদের লোকসান গুনতে হয়েছিল। এ বছর কর্তনকালীন এবং এক থেকে দুই মাসের মধ্যে কৃষক গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণ ধান বাজারে বিক্রি করেছেন।
ধান-চালের মজুদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ধানের ক্ষেত্রে গত বছর জুন মাসে কৃষকের গোলায় মোট মজুদের ২০ শতাংশ ধান ছিল, যা এ বছর একই সময় প্রায় ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অন্য দিকে চাল মজুদের বেলায় দেখা যায় যে, ভোক্তাশ্রেণী ভবিষ্যৎ খাদ্যঘাটতির শঙ্কা থেকে আতঙ্কিত হয়ে বেশি পরিমাণ চাল মজুদ করেছেন। অপর পক্ষে সরকারসহ (গত বছর জুন পর্যন্ত সরকারি মজুদ ছিল ১২.৫৬ লাখ টন, যা এবার কমে ৯.২৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে) অন্যান্য চাল ব্যবসায়ীরা গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণে চাল মজুদ করেছেন।
চাল উৎপাদন খরচের ক্ষেত্রে মৌসুমে বিদ্যমান সর্বনিম্ন দামে মিলাররা যে ধান ক্রয় করেন সেটি থেকে কেজিপ্রতি চাল উৎপাদনে ২৭.৮৬ টাকা খরচ হয়। অন্য দিকে সর্বোচ্চ দাম বিবেচনায় দেখা যায়, কেজিপ্রতি চাল উৎপাদনে ৩৫.৮০ টাকা খরচ হয়। গড় বিবেচনায় এক কেজি চাল উৎপাদনে ৩২.৩৪ টাকা ব্যয় হয়। তবে বিদ্যুৎ বিল, যানবাহন ও শ্রমিক খরচ বাড়ার কারণে এ বছর মিলিং খরচ ৮.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খরচ বাড়লেও এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, সরকার ঘোষিত দামে চাল বিক্রি করে মিলাররা লাভবান হচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement