২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
দুদকের নোটিশ

গণপূর্ত অধিদফতর প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

-

গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজের মাধ্যমে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার অবৈধ সম্পদ খতিয়ে দেখতে দুদকও নড়েচড়ে বসেছে। জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রী সাবিনা আলমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আশরাফুল আলম ও সাবিনা আলমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার তথ্য মেলায় এ নোটিশ দেয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, তারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের নিজেদের, নির্ভরশীল ব্যক্তিদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নোটিশের পরও থেমে নেই গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের দুর্নীতি। নানা লবিং-তদবির করে দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া শত শত কোটি টাকা দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীও হয়েছেন তিনি। গত ২৬ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর আশরাফুল আলমের দুর্নীতির নানা চিত্র তুলে ধরে অভিযোগ করেন ঠিকাদার মো: তৌফিক ইসলাম।
লিখিত অভিযোগে তৌফিক ইসলাম জানান, আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত ব্যাহত হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি। কাজে তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বহাল রেখে তদন্ত করলে সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ারও আশঙ্কা করছি। এই আশরাফুল আলম যুবলীগের কথিত নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) সিন্ডিকেটের সদস্য। প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর তার দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যকলাপ আরো বেড়েছে। তিনি আরো জানান, আশরাফুল আলম প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য ঠিকাদার রিন্টু আনোয়ার এবং সদরুল ইসলাম সায়মনের সঙ্গে ২০ কোটি টাকার একটি অঙ্গীকারনামা করেন। কিন্তু বিগত কয়েক মাসের মধ্যেও ২০ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় গত ২১ জুলাই রিন্টু আনোয়ার তার দলবলসহ প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের কক্ষে যান। এ সময় কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে; যা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এ ছাড়া জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম ও প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসার মাধ্যমে মানহীন সরঞ্জাম সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গণপূর্তের শেরে বাংলা নগর ডিভিশন-১ এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৯ এর ৬ আগস্ট পর্যন্ত (সংসদ ভবন) ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে ৩ শ’ জনকে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ দেন। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে বিশাল অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠে আশরাফুলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচারে বিভিন্ন ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি এবং খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement