১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘুরে দাঁড়াতে বিমানের চার পরিকল্পনা

-

ঘুরে দাঁড়াতে চার পরিকল্পনা নিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিমান। করোনায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসানে পড়ার পর নতুন এ পরিকল্পনা হাতে নেয় রাষ্ট্রীয় এ বিমান সংস্থা। পরিকল্পনায় রয়েছে, স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান ক্যাপিটাল প্ল্যানিং, গ্রাহক চাহিদা পূরণে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাড়ানো, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার মানবৃদ্ধি।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে অধীনস্থ দফতরগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে এমন পরিকল্পনা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এরই মধ্যে নতুন এ পরিকল্পনার চুক্তি সমাপ্ত হয়েছে।
পরিকল্পনার মধ্যে আরো রয়েছে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আইএসএজিও সনদ ও উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে ইএএসএ-১৪৫ সনদ অর্জন করা। পাশাপাশি বিমানের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক ও সুপরিসর হ্যাঙ্গার নির্মাণ করা, তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বেবিচকের গাইডলাইন অনুসারে বিমানকে প্রস্তুত করা।
আন্তর্জাতিক মানের গ্রাহক চাহিদা পূরণে গুয়াংজু, টরেন্টো, টোকিও, চেন্নাই, কলম্বো, মালে, শারজাহ, সালালাহ, বাহরাইন ও নিউইয়র্ক স্টেশনে বিমানের ফ্লাইট চালু, বিমানের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক মানের সেবা তৈরি ও সেবাদানের মাধ্যমে লাভের ধারা বজায় রাখাও এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সরকারি-বেসরকারিসহ বিমান কোম্পানিগুলোর লোকসান হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। কারণ বিমানের উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি মাসে খরচ হয় ২৬৬ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রতি মাসে লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের জন্য ৯৮ কোটি টাকা আর বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি বাবদ ৭০ কোটি। এ ছাড়াও কর্মকর্তাদের বেতন ও দেশ-বিদেশের অফিস রক্ষণাবেক্ষণে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়। করোনাকালে বিমান বন্ধ থাকলেও এই খাতগুলোর খরচ কমেনি। অন্য দিকে এবার হজ বাতিল হওয়ায় শুধু হজ ফ্লাইট থেকে ৯৪৬ কোটি টাকারও বেশি আয় হারায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এসবের মধ্যেই বিমানের লোকসান গুনতে হয়েছে ১৭ শ’ কোটি টাকা। যদিও বর্তমানে ফ্লাইট চলছে। কিন্তু মিলছে না প্রত্যাশিত সংখ্যক যাত্রী। তাই লোকসান ঠেকাতে অভ্যন্তরীণ রুটে চালু হওয়া ফ্লাইট ফের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে আন্তর্জাতিক তিন গন্তব্যেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ যাত্রী মিলছে না। এরই মধ্যে বিমান বিভিন্ন হারে তাদের কর্মীদের বেতন কমিয়েছে। আর বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো তাদের কর্মীদের অবৈতনিক ছুটিতে পাঠিয়েছে। সব বিবেচনায় টিকে থাকতে নতুন এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মোকাব্বির হোসেনের সই করা ওই কর্মসম্পাদন চুক্তিতে বলা হয়, চার ধরনের কাজে গুরুত্ব দিয়ে বিমান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে চায়। সেসব পরিকল্পনার মধ্যে একটি হলো স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান ক্যাপিটাল প্ল্যানিং। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া, যথাযথ পদায়ন, মূল্যায়ন, প্রণোদনার মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়াটা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশে গত বছরের তুলনায় এই বছর বিমান যাত্রীর সংখ্যা গড়ে ৪৯ শতাংশ কম হবে। আয়াটার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত কোনো এয়ারলাইন্স কর্মী ছাঁটাই না হলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান কোম্পানি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের বেতন বিভিন্ন হারে কমিয়ে দিয়েছে। বিমান শ্রমিক লীগ বলছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সাথে জড়িতদের বেতন কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ আর কর্মকর্তা পর্যায়ে কাটা হয়েছে ২০ শতাংশ। এসব কারণে বিমান খাতের সাথে নানাভাবে জড়িত ৬৩ হাজার কর্মী চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement