২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসে সেমিনার

বর্ধিত চাহিদা পূরণে আমদানির বিকল্প ছিল না : জ্বালানি উপদেষ্টা

-

দেশে বর্ধিত চাহিদা পূরণে জ্বালানি আমদানির বিকল্প ছিল না। তবে বর্তমানে আমদানির পাশাপাশি দেশীয় খনি থেকে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজও এগিয়ে চলছে। স্থলভাগের গ্যাস নিয়ে অন্যদের মতো আমিও বেশ আশাবাদী। কারণ মানসম্পন্ন ও সুলভ জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বৈচিত্র্যের বিকল্প নেই।
গতকাল জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে জ্বালানি বিভাগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী এ কথা বলেন। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এক দিকে নতুন নতুন শিল্পায়ন শুরু হয়, অন্য দিকে মজুদ গ্যাসের অপর্যাপ্ততা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করে এলএনজি আমদানির পথ সুগম করেন। বর্তমান চাহিদার আলোকে দেশীয় জোগানের পাশাপাশি এই এলএনজি এখন জ্বালানির অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উৎস।
জ্বালানি আমদানির পেছনে যুক্তি তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, এখন আমাদের হাতে আছে কেবল গভীর সমুদ্রের গ্যাস। কিন্তু আজকে আবিষ্কার হলেও তা কাজে লাগাতে আরো অন্তত ১০ বছর সময় লেগে যাবে। সুতরাং কোনো কিছুর অপেক্ষায় বসে থাকলে চাহিদার জোগান দেয়া সম্ভব হবে না। একাধিক বিকল্প নিয়েই এগোতে হবে। পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমানে ২৭টি কূপ থেকে সর্বোচ্চ ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু ক্রমাগতভাবে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আমদানির দিকে যেতে হয়েছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও গ্যাসের চাহিদা কমেনি। ফলে বোঝা যায় শিল্পগুলো তাদের উৎপাদনে ফিরে আসতে পেরেছে। জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এই খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এখানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে অহরহ। সব দিক বিবেচনা করেই আমরা মিক্স ফুয়েলের দিকে গিয়েছি, যাতে কোনো একটি উৎসে সমস্যা হলেও তাতে সবকিছু থমকে না যায়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড-আরপিজিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জমান। দেশের সমুদ্র বক্ষে জ্বালানি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও স্থলভাগে নতুন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করেন এই প্রকৌশলী। তবে তার ওই বক্তব্যের বিরোধিতা আসে স্বয়ং উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও অন্যান্য আলোচকদের কাছ থেকে। কামরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ। এখানে ফুটো করতে করতে একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। অনশোরে নতুন করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পুরনো ও পরিত্যক্ত গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে এখন চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০১০ সালে গ্যাস থেকে ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ উপাদন হলেও সেটাকে কমিয়ে আনা হচ্ছে। ২০৩০ সালে সেটা ৪৫ শতাংশে নেমে আসবে এবং ২০৪১ সালে সেটা ৩৫ শতাংশে নেমে আসবে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনা হবে। ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে এমন দাবির বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সারা বাংলাদেশে যে পরিমাণ ড্রিলিং করা হয়েছে, অনেক সময় একটি খনিতেও এর চেয়ে বেশি ড্রিলিং হয়ে থাকে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, স্থলভাগে সম্ভাবনা খুব একটা নেই, সে ব্যাপারে আমারও দ্বিমত রয়েছে। অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান সরকার, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আব্দুল ফাত্তাহ, বিপিসির চেয়ারম্যান সামছুর রহমান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল