২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্বাস্থ্যের নতুন ডিজির নতুন নির্দেশনা, মুখ বন্ধ সব কর্মকর্তার

-

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম তার দায়িত্বে যোগদান করতে না করতেই মিডিয়ার আলোচনায় উঠে এসেছেন। ‘তার নির্দেশনা ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা মিডিয়ার সাথে কথা বলতে পারবেন না’- স্বাস্থ্য অধিদফতরের সকল কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশ পাঠিয়ে আলোচনায় উঠে এলেন তিনি। এর আগে প্রথম দিন মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির দায় সবার’ বলে হাসির খোরাক হয়েছিলেন তুন মহাপরিচালক।
মহাপরিচালকের নতুন এ নির্দেশনা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাঠপর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। তাদেরও মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে আগে মহাপরিচালকের অনুমতি নিতে হবে। তিনি কাজ শুরু করতে না করতেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে করোনা সংক্রান্ত সংবাদ বুলেটিনের পাঠকও পরিবর্তন করে দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা: বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ নতুন করে বুলেটিন প্রচার শুরু করেছেন। অবশ্য অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ আগে থেকে বিটিভির মাধ্যমে পরিচিত। তিনি বিটিভিতে খবর পাঠ করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ এরপর থেকে নিয়মিতই করোনা সংক্রান্ত বুলেটিন প্রচার করবেন। এর আগে নাসিমা সুলতানাকে বুলেটিন প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন গত মাসে পদত্যাগী মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তারও আগে এবং করোনা সঙ্কটের শুরু থেকে এই বুলেটিন প্রচার এবং এ সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিং করতেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
জানা গেছে, অধ্যাপক ফ্লোরার সাথে সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে করোনা সংক্রান্ত বুলেটিন প্রচার থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। আবার অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেন বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজির ভুয়া করোনা রিপোর্ট দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। এই দুইটি প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাই না করেই করোনা টেস্ট ও রিজেন্টকে করোনা চিকিৎসার অনুমতি দেয়ায় অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে সরে যেতে হলো। অবশ্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সকল কর্মকর্তার সাথে মিডিয়ার লোকেরা কথা বলতে পারতেন এবং সাধারণ একজন মেডিক্যাল অফিসারও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলতে পারতেন। এর জন্য কোনো পূর্বানুমতির প্রয়োজন হতো না। আবার কিছু দিন পরপর সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময়েরও আয়োজন করতেন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
বর্তমান মহাপরিচালকের নতুন এ নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তাই পছন্দ করছেন না। ‘মিডিয়ার সাথে কথা বলা যাবে না’ মর্মে নতুন মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের এ নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও পরিচালকদের কাছে, সব স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালকদের কাছে, এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের কাছেও। দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের মুখও বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে নতুন নির্দেশনায়।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে উদ্দেশ্য সাধন হবে না। সরকারেরও কোনো উপকার করা যাবে না বরং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। সঠিক তথ্য না পেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকাণ্ড ভুলভাবে উপস্থাপন হওয়া আশঙ্কা রয়েছে। মহাপরিচালক সব মিডিয়ার সাথে কথা বলতে পারবেন না, কারণ তাকে নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতে হবে। ফলে কথা বলতে না পারলেও মিডিয়ার কাছে যে তথ্য যাবে তা তারা প্রচার করবেই। একবার প্রচার হয়ে গেলে যত সংশোধনীই দেয়া হোক না কেন তা সবার কাছে পৌঁছাবে না। ক্ষতি না হওয়ার হয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement