২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুই হাজার কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা

ফরিদপুরে আলোচনায় রুবেল ও বরকতের পৃষ্ঠপোষকেরা

-

ফরিদপুরে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পুঁজি করে দুই হাজার কোটি টাকা উপার্জন ও পাচারের ঘটনায় দায়েরকৃত মানিলন্ডারিং মামলায় একের পর এক গ্রেফতারে ফরিদপুরের জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বহুল আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ গ্রেফতার হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরো ১৬ জন নেতা। আরো অনেকেই গ্রেফতারের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। তবে জেলায় এখন তুমুল আলোচনা চলছে এই বরকত ও রুবেলদের পৃষ্ঠপোষক কারা? তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, ফরিদপুরে আর কাউকে সন্ত্রাসী ও অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হবে না। কারো বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশের চলমান অভিযানের শুরুতেই গত ৭ জুন রাতে ৭ সহযোগীসহ গ্রেফতার হন সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল। বরকত ছিলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই তিনি শহর যুবলীগের সভাপতি হন। এ ছাড়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতিও হন তিনি। তারপরই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের সাংবাদিকতার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হন এবং একটি পত্রিকার ডিক্লারেশনও নেন। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রুবেল আর প্রকাশক হন বরকত। এ ছাড়া ফরিদপুরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও তারা কব্জায় নেন। বিরুদ্ধমতকে দমন করতে তারা স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে একের পর এক চরমপন্থার জঘন্য নজির সৃষ্টি করেন। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাস, জমি দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন তারা। এরপর একের পর এক বিভিন্ন সরকারি সংস্থা দখল করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। যাকে খুশি তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করতেন। তাদের আক্রমণের শিকার হয়ে অনেকে শহর থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। ফরিদপুরের বাইরেও খুলনা, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরা, পটুয়াখালী, শেরপুর, সিলেট, গাজীপুর ও দিনাজপুরেও ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের। গ্রেফতারের পর ঢাকায় সিআইডি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে তারা এসব জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, জবানবন্দীতে অন্যান্য আরো অনেক সহযোগীর নামও বলেছেন তারা। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
ফরিদপুর জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, মানিলন্ডারিং মামলায় সর্বশেষ ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিনে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেবি, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ওরফে ফারহান এবং জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ঢাকায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ফরিদপুরের জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শামসুল হক ভোলা মাস্টার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুরের বিভিন্ন উন্নয়নে যেসব কর্মকাণ্ড অনুমোদন করেছেন তার সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয়েছে। তার অভিযোগ, এই লুটপাটে বরকত-রুবেলকে ব্যবহার করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। তাদের সম্পদের হিসাব নিলেই মূল খবর বেরিয়ে আসবে। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, রুবেল-বরকতের জন্ম হঠাৎ করে হয়নি। আশ্রয়-মদদদাতাদের কারণে তাদের উত্থান হয়েছে। তাদের দাপটে আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে ছিল। সবাইকেই আইনের আওতায় আনতে হবে, যাতে ক্ষমতা পেলেই কেউ যা খুশি তা-ই করতে না পারে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ বলেন, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের দুর্নীতির সাথে সরকারি একটি গণমাধ্যমে কাজ করে এক সাংবাদিকের সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছে। পাশাপাশি বরকতের শ্বশুর ও তার শ্যালকদের চাঁদাবাজি ও জমি দখলের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। সব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ। তিনি দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
ফরিদপুুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোস বলেন, দলের সুবিধাভোগীরাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি নূর মোহাম্মদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা শওকত আলী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির হোসেনকে কুপিয়ে আহত করেছিলেন। তারা ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে একাধিক বারের সভাপতি ও ‘নাগরিক বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদক কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, প্রথম আলোর সাংবাদিক পান্না বালা এবং ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো: হালিমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, দখলদারদের অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যার যার সম্পত্তি, তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। এ ছাড়াও যেসব সম্পদ অবৈধভাবে উপার্জন করেছে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জমা দেয়ার আহ্বান জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
মন্ত্রী-এমপি’র স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা : কাদের গ্যাটকো মামলা : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুনানি ২৫ জুন বুড়িচংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে ৩টি সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ছেলে হারা মা সাথিয়ার কান্না যেন থামছেই না বৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় প্রবাসী স্ত্রী থেকে প্রতারণার মাধ্যেমে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়, ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরো ৪৬ বিজিপি সদস্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

সকল