১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিগগিরই পর্যটন খাত চালুর চিন্তা

-

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের পর্যটন খাত শিগগিরই চালুর চিন্তা করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পর্যটন খাত চালুর বিষয়ে প্রণীত একটি কার্যপ্রণালী সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে অনিয়ন্ত্রিত মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে আতঙ্কিত মানুষ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আদৌ আসবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধসে পড়া এই খাত পুনরুদ্ধারে সবার আগে দরকার আর্থিক সহায়তা।
দেশের পর্যটন খাত চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ জানান, প্রথমে পর্যটনের উপখাতগুলো চালুর লক্ষ্যে একটা ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) তৈরি হচ্ছে। যেখানে কিভাবে পর্যটন খাতকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে তা বলা থাকবে। এ সপ্তাহের মধ্যেই তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার তা অনুমোদন দিলে পর্যটনের উপখাতগুলো চালুর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর প্রথম সহসভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেছেন, পর্যটন খাত চালু হলেও তা ঘুরে দাড়াতে অনেক সময় লাগবে। কারণ করোনোর প্রভাবে এ খাত সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মতে, বৈশ্বিকভাবে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ১০ শতাংশ পর্যটন খাতের মাধ্যমে হয়ে থাকে। দেশে পর্যটন খাত ততটা উন্নত না হলেও এর সঙ্গে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত।
মহামারীর কারণে চার মাস ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শত শত হোটেল-মোটেল, খাবারের দোকান ও মার্কেটসহ পর্যটন নির্ভর কয়েক হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অথচ দেশের পর্যটন খাতের মোট আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে কক্সবাজার থেকে। এ ছাড়া দেশে ২০০টির মতো রিসোর্ট রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই গড়ে উঠেছে ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরে। ময়মনসিংহের ভালুকার মেঘমাটি ভিলেজের মতো রিসোর্টগুলো এখন রয়েছে সঙ্কটে। মৌলভীবাজারের গ্র্যান্ড সুলতানের মতে বড় হোটেলগুলো রয়েছে অতিথি শূন্যতায়।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, করোনাভাইরাসের কারণে হোটেলগুলো এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অপর দিকে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়শন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো: রাফিউজ্জামানের মতে, পর্যটন শিল্পকে দাঁড় করাতে সরকার যে পরিকল্পনাই নিক না কেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দ্রুত আর্থিক সহায়তা না দিলে তা ঘুরে দাঁড়াবে না। তিনি বলেন, এসওপি করে সরকার কিছু নির্দেশনা দেবে কিভাবে পর্যটকদের গ্রহণ করা হবে। এর আগে তো দরকার আমাদের ব্যবসা চালু করা। সরকার যদি আর্থিক কোনো সহযোগিতা না করে তাহলে এই শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সচিব হিমেল পর্যটন শিল্প খাতকে বাঁচাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণের কিস্তি আগামী বছরের জুনের আগে না নেয়া ও ইউটিলিটি বিল মওকুফের দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি সেবাখাতের জন্য সরকারের ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মোহাম্মদ সাইফুল হাসান বলেন, পর্যটন শিল্পের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তাসহ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি জানান, এই রিকভারি প্লান বিশাল। তা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি বিষয়ে আলাদা গাইডলাইন তৈরি হচ্ছে।
এর আগে গত ৩০ জুন প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘কোভিড-১৯ ও দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীতে পর্যটন খাতের ক্ষতির কারণে জিডিপি থেকে ২০৩ কোটি ডলার (প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা) হারাতে পারে বাংলাদেশ। এর ফলে সরাসরি ৪ লাখ ২০ হাজার কর্মসংস্থান ও খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের জীবিকা কির মুখে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement