২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

না’গঞ্জে কোরবানি দিতে না পারায় ঘরে ঘরে বোবা কান্না

বিব্রতকর পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী
-

হাজী ছিদ্দিকুর রহমান একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। ৩ বছর ধরে প্রতি কোরবানি ঈদের ৪-৫ দিন আগে গরু কিনতেন তিনি। কোরবানির পশু দেখার জন্য মহল্লার মানুষের মধ্যে একটা ভিড় লাগত। কত দাম দিয়ে কিনছেন তা বলতে বলতে অনেকটা হয়রান হয়ে যেতেন তিনি। একটা আমেজ আর আনন্দও পেতো ছিদ্দিকুর রহমানের পরিবার। কিন্তু করোনার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে গেছেন ব্যবসায়ী ছিদ্দিকুর রহমান। ব্যবসায় ধস নেমে এখন অনেক টাকা ঋণ তার। টাকা না থাকায় এবার কোরবানি দিচ্ছেন না। সে কারণে মহল্লায় অনেকটা নিজেকে আড়াল করে রাখছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়া দিগন্তকে ছিদ্দিকুর রহমান জানান, কিভাবে যে বলি। লজ্জায় বলাও যাচ্ছে না। এবার আমার পক্ষে কোরবানি দেয়া সম্ভব নয়। ৩০ বছর ধরে কোরবানি দিয়ে আসছি কিন্তু এবার আর্থিক অনটন এমনভাবে ধরেছে কোরবানি দিতে পারব না। মহল্লায় আমার একটা সম্মান আছে কিন্তু কি করব তাই লোকলজ্জায় নিজেকে আড়াল করে রাখি। করোনা আমার ব্যবসা বাণিজ্য সব শেষ করে দিয়েছে।
শুধু হাজী ছিদ্দিকুর রহমানই নন, নারায়ণগঞ্জে অনেকে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবার আর্থিক সঙ্কটের কারণে কোরবানি দিতে পারছেন না। অনেকেই জীবনের এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন। কোরবানি দিতে না পারার আফসোস আর লজ্জার কারণে অনেকে নিজেকে আড়াল করে রাখছেন। ফলে এখানে প্রায় প্রতি বাড়িতে চলছে বোবা কান্না। ঘর থেকে বের হলে মানুষ জিজ্ঞাসা করবে গরু কিনছেন কি না? তাই বিব্রত হওয়ার আশঙ্কায় নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে স্থায়ী বাসিন্দার চেয়ে ভাসমান লোকজন বেশি। যাদের বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের জানাশোনা পরিচিতি অনেক। সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের বেশির ভাগই ডাক পড়ে। তাই কোরবানির পশু অনেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে কিনতেন। হাট থেকে গরু কিনে নিজেই রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসতেন। মানুষ দাম জিজ্ঞাসা করে আর গরুর রশি দিয়ে টেনে নিতে নিতে দাম বলার মধ্যে একটা আমেজ পেতেন। কিন্তু এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা।
নারায়ণগঞ্জ নয়ামাটি এলাকার হোসিয়ারি ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান জানান, ভাবতেও পারিনি এমন সমস্যার মুখোমুখি হবো। করোনার কারণে ব্যবসা শেষ। এখন কোরবানিও দিতে পারব না। বাইরে তো দূরে থাক ঘরের মানুষকেও মুখ দেখাতে লজ্জা পাই।
সিদ্ধিরগঞ্জের তাতখানা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলমাস জানান, সম্মান বাঁচাতে প্রায় ২০ জনের কাছে টাকা ধার চেয়েছি কোরবানির পশু কেনার জন্য। কিন্তু পাইনি। অথচ আগে আমিই মানুষকে গরু কিনতে সহায়তা করতাম। মহল্লার গরিব মানুষ বারবার আসছে গরু কিনেছি কি না জানতে।
বন্দর লক্ষণখোলা এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী আখতার হোসেন বলেন, অন্যবার কয়েকজন মিলে একটা গরু কিনে কোরবানি দিতাম। এবার পকেটে টাকা-পয়সা নেই। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোরবানি দেবো না। ভাইবোনেরা কোরবানি দেবে। ঈদের দিন বোনের বাসায় চলে যাবো পরিবার নিয়ে।

 


আরো সংবাদ



premium cement