২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢাকা চেম্বার ওয়েবিনারে বক্তাদের দাবি

জটিল প্রক্রিয়ায় এসএমই উদ্যোক্তারা এখনো জরুরি ঋণসহায়তা পাননি

-

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এসএমই উদ্যোক্তারা এখনো প্রয়োজনীয় ঋণসহায়তা পাননি দাবি করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে গতকাল বক্তারা বলেছেন, ঋণ প্রদানে বিদ্যমান প্রক্রিয়াও অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমান ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করার দাবি জানান তারা। এ ছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং পিকেএসএফ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিকরণেরও দাবি জানানো হয় ওয়েবিনার থেকে।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো: নাসের। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কপোরেশনের (বিসিক) মহাব্যবস্থাপক আখিল রঞ্জন তরফদার, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো: নাজিম হাসান সাত্তার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফেরদৌসি বেগম, ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধান সঞ্জীব কুমার দে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ইভিপি আনোয়ার ফারুক তালুকদার, এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মইনুদ্দিন, কৃষি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আফজাল করিম, প্রাইম ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধান সাইদ এম ওমর তাইয়ুব, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইভিপি মো: ইমতিয়াজ উদ্দিন, ওয়ান ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধান কামরুল ইসলাম, ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এন কে এ মবিন এবং সহসভাপতি মোহাম্মদ বাশিরউদ্দিন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে কটেজ, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে দাবি করে স্বাগত বক্তব্যে শামস মাহমুদ বলেন, এ খাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩ মিলিয়ন, যারা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩৫.৪৯ শতাংশের জোগান দিচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো ‘কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং এ অবস্থা উত্তরণে সরকারের পক্ষ হতে ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা ব্যাংক হতে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণসহায়তা ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো: নাসের বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার জন্যই মূলত প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকসমূহ ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তাদের ঋণসহায়তা প্রদানে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ প্রদান ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক এবং গ্রাহকদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাহী পরিচালক বলেন, উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানে দেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহ বেশ এগিয়ে এসেছে এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকসমূহকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের ঋণ নেয়া এবং তাদের ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান, পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনার ওপর আরো বেশি মনোযোগী হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সহায়তাটি ‘ওয়ার্কিং লোন’-এর ন্যায় ‘টার্ম লোন’ হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ^াস প্রদান করেন।
আখিল রঞ্জন তরফদার বলেন, দেশের বৃহৎ শিল্পের সহায়ক খাত হিসেবে এসএমইর উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ ব্যাংক হতে ঋণসহায়তা পেয়ে থাকে এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদানের হার বাড়ানোর জন্য ব্যাংকসমূহকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়াও তিনি দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য বিসিকের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব করেন। তিনি জানান, বর্তমানে সারা দেশে ৭৬টি বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে, যেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে সার্ভিস চার্জ মওকুফ করেছে। এ ছাড়াও ভবিষ্যতে সারা দেশে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আরো ৫০টি শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে বলে তিনি তথ্য প্রকাশ করেন।
মো: নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে উদ্যোক্তারা কিভাবে ঋণসহায়তা পাবে, সে ব্যাপারে গাইডলাইন প্রস্তুত করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণসহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সঙ্ঘবদ্ধভাবে আবেদনের প্রস্তাব করেন এবং এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বর্তমান পরিস্থিতিকে বিশেষ পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে প্রথাগত মনোভাব পরিহার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রতিটি ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়াও তিনি উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য শুধু ব্যাংকের ওপর নির্ভর করার প্রবণতা পরিহার করে, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফের মতো প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় মুদ্রানীতিতেও পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফেরদৌসি বেগম বলেন, প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণসহায়তা পাওয়ার জন্য বেশির ভাগ কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাবৃন্দের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই, তবে উদ্যোক্তাবৃন্দ যেন দ্রুততম সময়ে ঋণসহায়তা পেতে পারেন সে বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল