১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেতন বোনাস না পাওয়ায় ঈদ আনন্দ বঞ্চিত পৌর কর্মচারী

-

নিয়মিত বেতন-ভাতা না পাওয়ায় এবারো ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের পৌরসভায় কর্মরত প্রায় ৩৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। এক দিকে করোনা সংক্রমণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, অন্য দিকে বেতন বোনাস না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। সঙ্কট সমাধানে স্থানীয় সরকার বিভাগ কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ৩২৮টি পৌরসভার নাগরিক সেবার মান সচল রাখার স্বার্থে পৌরসভাগুলোকে ঢেলে সাজাতে ও পৌরসভার বেতন-ভাতার সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএপিএস)।
জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সরকার নির্দেশিত বিভিন্ন নাগরিকসেবা, ত্রাণ বিতরণ, করোনা প্রতিরোধে নানাবিধ কার্যক্রম সচল রাখতে গিয়ে দেশের পৌরসভাগুলোর মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ পর্যন্ত ২৭ মেয়র, ৪৭ কাউন্সিলর ও ১৪৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের সবাই নিজস্ব অর্থায়নে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ মেয়র, ২২ কাউন্সিলর ও ৬৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ জন কাউন্সিলর ও তিনজন কর্মচারী। মারা যাওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আব্দুল আহাদ, কালিয়াকৈর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর মোসাম্মৎ হাজেরা বেগম, কবিরহাট পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনোয়ার। কর্মচারীদের মধ্যে সেনবাগ পৌরসভার নৈশপ্রহরী জয়নাল আবেদীন ফকির, নাজিরহাট পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী মো: জসীম উদ্দিন চৌধুরী ও বিরামপুর পৌরসভার টিকাদানকারী সুপারভাইজার ময়নুল ইসলাম।
এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার পরও বেতনভাতা নিয়মিত না পাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএপিএস) ঢাকা বিভাগের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনে বলা হয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত পৌরসভায় কর্মরত জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণকে সেবা প্রদান করতে গিয়ে নিজেরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন; এমনকি মৃত্যুবরণ করছেন। এ অবস্থায় মাস শেষে বেতন-ভাতা প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বেতন-ভাতা খাতে সংশোধনী বাজেটে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধিকরাসহ বেতন-ভাতা প্রাপ্তির বিষয়ে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো করোনায় যারা সরাসরি কাজ করছেন কিংবা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ঝুঁকি ভাতা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া সেবা খাতে কর্মরত পৌরসভার জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে করোনা পরীক্ষা ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা বিভাগের সভাপতি মো: আনোয়ার সাদাত বলেন, করোনা সঙ্কটের কারণে ৮০ ভাগ পৌরসভায় বেতন-ভাতা ও বোনাস হয়নি। যার ফলে এবারো ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ঈদে সরকার বেতন-ভাতা খাতে ৪৫ কোটি টাকা (এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ) বরাদ্দ দিলেও এ ঈদে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ কারণে দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পেয়ে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ কটিয়াদী পৌরসভার সচিব মো: আলমগীর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ম ই তুষার বলেন, বেতন-ভাতার সঙ্কটসহ নানাবিধ সঙ্কট সমাধানে নিয়ামক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার বিভাগ কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। ৩২৮টি পৌরসভার নাগরিকসেবার মান সচল রাখার স্বার্থে পৌরসভাগুলোকে ঢেলে সাজানোসহ সংশোধনী বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে ৪০০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement