১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পণ্যবাহী জাহাজ পরিচালনায় অনিয়ম বেতন পাচ্ছেন না ১০ হাজার শ্রমিক

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের ৬ দফা দাবি
-

অনিয়মের কারণে পণ্যবাহী জাহাজ পরিচালনায় এখন বেহাল দশা চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও বহিঃনোঙরে মাদার ভেসেল হতে পণ্য পরিবহন করতে না পারায় এক হাজার বৈধ জাহাজের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তারা বেতন পাচ্ছেন না গত তিন মাস ধরে। এ নিয়ে জাহাজ শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) ঢাকার অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান মো: নুরুল হক লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন।
বৈধ জাহাজ মালিকরা পণ্য পরিবহন না করতে পারাকে সমস্যার মূল কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ জন্য তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ছয়দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে- সব জাহাজ নৌ নীতিমালা অনুযায়ী চলাচল করা, সব জাহাজ ডব্লিউটিসির নীতিমালা অনুযায়ী পণ্য পরিবহন করার সুযোগ, অবৈধ বালুবাহী বাল্কহেড বন্ধ করা, সিরিয়ালবিহীন জাহাজ চালানো বন্ধ করা, ফ্যাক্টরির মালিকদের আমদানিকৃত ৫০ শতাংশ পণ্য গেজেট মোতাবেক ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত জাহাজে পরিবহন করা ও নৌপথের বিভিন্ন স্থানে অতিসত্বর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নুরুল হক বলেন, ২০০৪ সালের আগ পণ্য পরিবহনে মধ্যস্বত্বভোগী এজেন্টরা আমদানিকারক ও ফ্যাক্টরির মালিকদের কাছ থেকে তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করতেন এবং জাহাজ মালিকদের পরিবহন ভাড়া অতি সামান্য প্রদান করতেন। সব পণ্য পরিবহন এদের জিম্মিদশায় বন্দী ছিল। যার কারণে অনেক জাহাজ মালিক জাহাজের মেরামত খরচ ও স্টাফদের বেতন প্রদান করতে না পেরে জাহাজ স্ক্র্যাপ করে ব্যবসায় ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এমতাবস্থায় জাহাজ মালিক, শ্রমিক, আমদানিকারক, ফ্যাক্টরির মালিক তথা নৌ সেক্টরের সবার দাবির প্রেক্ষিতে সরকারি প্রতিনিধি ও বেসরকারি সব সংগঠনের অংশগ্রহণে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) গঠন করা হয়, যা ২০১৩ সালের ৮ জুলাই নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। উক্ত নীতিমালা অনুযায়ী সব জাহাজ সিরিয়ালভুক্ত হয়ে চলাচল করবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ফ্যাক্টরির মালিকরা তাদের নিজস্ব জাহাজ দিয়ে সিরিয়ালবিহীনভাবে পণ্য পরিবহন করে চলেছেন। আমরা বারবার তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এর সুষ্ঠ সমাধান করতে চাইলেও কোনো সমাধান হয়নি। যে কারণে গত তিন মাস ধরে ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চলাচলকারী জাহাজগুলো একটি ট্রিপও পাচ্ছে না। অন্য দিকে ফ্যাক্টরির মালিকদের নামে- বেনামের সিরিয়ালবিহীন জাহাজগুলো প্রতি মাসে চার-পাঁচটি ট্রিপ পণ্য পরিবহন করছে। এতে সিরিয়ালভুক্ত জাহাজ মালিকরা হচ্ছেন বঞ্চিত। শুধু তাই নয়, মধ্যস্বত্বভোগী ও কিছু অসাধু জাহাজ ব্যবসায়ী সার্ভে/রেজিস্ট্র্রেশনবিহীন ও বে-ক্রসিং অনুমোদন ব্যতীত বালু বহনকারী বাল্কহেড দিয়ে সমুদ্র উপকূল অতিক্রম করে মাদার ভেসেল হতে অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন করে চলছে।
অন্যদিকে সাধারণ জাহাজ মালিকদের সিরিয়ালভুক্ত এক হাজারের উপরে জাহাজ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে পণ্য পরিবহনের জন্য সিরিয়ালে অলসভাবে বসে আছে। সিরিয়ালবিহীনদের তা-বে তারা কোনো ট্রিপ পাচ্ছেন না। জাহাজ মালিকরা শ্রমিকদের তিন মাস ধরে বেতন দিতে পারছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পণ্য পরিবহনে দেখা দেবে অচলাবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শত শত জাহাজ মালিক, হাজার হাজার শ্রমিক। অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য। তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনের অনিয়ম দূর করার জন্য নৌ পরিবহন অধিদফতরে গত ১৮ ও ২৯ জুন মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ফ্যাক্টরির মালিকদের নেতৃবৃন্দ, পণ্যের এজেন্ট, লোকাল এজেন্ট ও জাহাজ মালিকদের যৌথ সভায় (অনলাইনে) নীতিমালা অনুযায়ী পণ্য পরিবহনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু সবার উপস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো এখনো কার্যকর হচ্ছে না। তাই সরকার আমাদের দাবিগুলো না মানলে আমরা সব জাহাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement