১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্মাণাধীন গোমা সেতু বাকেরগঞ্জে সওজের কাজে বিআইডব্লিউটিএর আপত্তি

-

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রাঙামাটি নদীতে নির্মাণাধীন গোমা সেতুর উচ্চতা না বাড়িয়ে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখায় আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিএ)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রাঙামাটি নদীতে নির্মাণাধীন গোমা সেতুর উচ্চতা না বাড়িয়ে নির্মাণ সম্পন্নœ করা হলে এ রুট দিয়ে দূরপাল্লা বিশেষ করে ঢাকাগামী লঞ্চ ও বড় বড় মালবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে এবং রুটটি মুখ থুবড়ে পড়বে। সেতুর উচ্চতা না বাড়িয়ে নির্মাণকাজ শুরু করায় আপত্তি জানিয়েছে তারা।
সেতুর উচ্চতা দ্বিতীয় শ্রেণীর করার সুপারিশ জানিয়ে গত মাসের মাঝামাঝি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল-দিনারেরপুল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকি আঞ্চলিক সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রাঙামাটি নদীতে নির্মিত হচ্ছে গোমা সেতু। ২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। আর নির্মাণাধীন এই সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে নদীতে সর্বোচ্চ জোয়ারের পানির উচ্চতা থেকে ৭ দশমিক ৬২ মিটার। কিন্তু পানি থেকে এই উচ্চতা নিয়েই আপত্তি জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
তাদের মতে, এই নদী দিয়ে যাত্রী ও মালবাহী ছোট ও বড় আকারের নৌযান চলাচল করে, যা একটি নৌরুট হিসেবে পরিচিত। ফলে এ নদীতে সেতু নির্মাণ করতে হলে পানি থেকে এর উচ্চতা নির্ধারিত নিয়মে হতে হবে। যাতে সড়ক ব্যবস্থা সচল থাকার পাশাপাশি নৌযান চলাচল সচল থাকে। কিন্তু সেতুটি এমন একটি উচ্চতায় তৈরি হচ্ছে, যার নিচ দিয়ে দূরপাল্লার বিশেষ করে ঢাকাগামী লঞ্চ চলাচল কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
এ দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেতু নির্মাণযজ্ঞ শুরু করছেন। তাদের মতে, রাষ্ট্রের দেয়া অর্থের অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তীরণ নৌচলাচল ও পরিবহন সংস্থার পরিচালক মো: মামুন অর রশিদ বলেন, সরকার কোনো নদী ও নৌরুট বন্ধ হোক তা কোনোভাবেই চায় না। কিন্তু উচ্চতা না বাড়িয়ে সেতুটি নির্মাণ করলে ওই রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল ব্যাহত হবে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌপথ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের দক্ষিণ বদ্বীপ অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক এসএম আজগর আলী জানান, এ নদীতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নিচে কোনো সেতু নির্মাণ করা হলে নৌচলাচলে ব্যাহত হবে। কিন্তু এখানে নির্মাণ হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর সেতু, ফলে গোমা সেতুটি জোয়ারের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতার থেকে ৭ দশমিক ৬২ মিটারে নির্মাণ করা হবে। রুটটি সচল রাখতে গোমা সেতুর উচ্চতা দ্বিতীয় শ্রেণীতে অর্থাৎ ১২ দশমিক ২ মিটার করার প্রস্তাবনা দিয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
মাঝারি ও বড়মানের সেতু নির্মাণের আগে বিআইডব্লিউটিএ থেকে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নেয়ার কথা জানিয়ে বরিশাল বিভাগের সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাসদু খান বলেন, সার্বিক সব ধরনের কাজসম্পন্ন করে সেতুটি নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর বিআইডব্লিউটিএর আপত্তির পর এর কাজ বন্ধ থাকলেও গত বছরের ২৩ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘সারা দেশে বিভিন্ন নদীতে যে উচ্চতায় সেতু নির্মিত হচ্ছে গোমা সেতুও একই উচ্চতায় সেতু নির্মিত হবে। বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে কোনো সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর সাথে সমন্বয় করা হবে। এটা তো আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত। সেই অনুযায়ী সেতু নির্মাণের কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বিআইডব্লিউটিএ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নিয়ে বসার কথা জানিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে সেতু নির্মাণ কার্যক্রমে সংশোধন আনা হবে। কিন্তু কোনোভাবেই নৌরুটটিকে বন্ধ করে সেতু নির্মাণ করা ঠিক হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement