২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার মাত্র ১২ মিনিট মারা যাচ্ছে ১০ হাজার সামুদ্রিক প্রাণী

-

একটি প্লাস্টিক ব্যাগ গড়ে মাত্র ১২ মিনিট ব্যবহার করা হয়। এর ফলে বছরে দশ হাজার সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়। একজন বছরে ৭০০টিরও বেশি ব্যাগ ব্যবহার করে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ হচ্ছে ৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে মিশে দূষণের শিকার হচ্ছে ১০ লাখের বেশি সামুদ্রিক পাখি। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে দেশে পাখির বিচরণ কমেছে প্রায় ৪০ হাজার। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি এক সময় দেশে অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) নতুন পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এসডো জানায়, বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ২ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, যার অধিকাংশ ফেলে দেওয়া হয় এবং ১ শতাংশ কম রিসাইকেল করা হয়। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ গড়ে ১২ মিনিটের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর দ্বারা বছরে দশ হাজার সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়।
সংস্থাটির তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর উৎপাদিত ১০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে এসে জমা হয়। যার ৭০ শতাংশ সমুদ্রের তলদেশে চলে যায়, যেখানে এটি সম্ভবত কখনই হ্রাস পাবে না। এ বর্জ্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রতিরোধ ক্ষমতা দমন, প্রজনন অপর্যাপ্ততা বা তীব্র বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। পলিথিনে মোড়ানো খাবার খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক, এটি স্পষ্টতই ক্যান্সার, চর্মরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার মাধ্যম।
এসডোর মহাসচিব ডা: শাহরিয়ার হোসেন জানান, কোটি কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ প্রতি বছর আবর্জনা হিসেবে সমুদ্রে জমা হয় এবং এই ব্যাগগুলো পলিপ্রোপিলিন দিয়ে তৈরি করা হয়। পলিপ্রোপিলিন এমন একটি উপাদান, যা পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা তৈরি হয়। এই উভয় পদার্থ অপূর্ণনবীকরণযোগ্য জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক এবং নিষ্কাশন এবং উৎপাদনের সময় এগুলো গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন ঘটায়, যা পর্যায়ক্রম বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে এবং পরিবেশও মানব স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ক্ষতিকারক।
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (ডিওই) জিয়াউল হক ‘বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ২০০২ সালে বিশ্বে প্লস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পথিকৃৎ দেশ হওয়া সত্ত্বেও, আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ এখনো সম্পূর্ণভাবে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার দূর করতে পারেনি। তিনি প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধকরণে এগিয়ে আসা এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের স্বার্থে ধীরে ধীরে প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বান জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ ও নদী দূষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি জমি বৃদ্ধি, সঙ্কীর্ণ আবাসস্থল, শিকার ও কীটনাশক ব্যবহার, হাওর, নদী ও উপকূলীয় চরগুলোসহ পাখির বসবাস ও বিচরণের ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বার্ড ক্লাবের সদস্য ও দেশের পাখি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন এবং পাখিদের বিচরণ এলাকায় মানুষের নানা তৎপরতার কারণে পাখিরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এর আগেও নানা কারণে পাখিরা স্থান বদল করেছে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে প্রাণিবিজ্ঞানী তপন কুমার দে জানান, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ৩০০ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক সামগ্রী মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর আট মিলিয়ন (৮০ লাখ) টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালা হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়।
সমুদ্রসৈকতে আসা পাখির খাদ্যগ্রহণের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে প্লাস্টিকের ছোট ছোট অংশ তাদের খাদ্যনালীতে চলে যায়। শুধু তাই নয়, পাখির ছোট বাচ্চাদের পেটে প্লাস্টিক কণা চলে যায় ও অকালে মারা যায়।
তিনি জানান, পরিসংখ্যানে ৯০ শতাংশের বেশি সামুদ্রিক পাখির পরিপাকতন্ত্রে প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে ৯৯ শতাংশ পাখির পেটে প্লাস্টিক কণা পাওয়া যাবে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement