২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রূপগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক ছাঁটাই আতঙ্ক, চাপা কান্না

পাওনা না বুঝিয়ে খালি হাতেই বিদায়
-

প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চল জোন রূপগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে অঘোষিতভাবে ও কৌশলী পন্থায় শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গুজব রয়েছে গার্মেন্ট কারখানাগুলোতেও শিগগিরই শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হবে। এমন খবরে রূপগঞ্জের গোটা শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক ছাঁটাই আতঙ্ক চলছে। শিল্পাঞ্চলের প্রায় ২ লাখ শ্রমিকের মাঝে চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের চাপা কান্না দেখার কেউ নেই। গত কয়েক দিনে রবিন টেক্সটাইল, অনুপম হোসিয়ারি ও পদ্মা টেক্সটাইল থেকে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। নিয়মকানুন না মেনে অবৈধভাবে শ্রমিকদের অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর বাধ্য করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস ও শ্রম আইন অনুযায়ী অন্যান্য পাওনা না বুঝিয়ে খালি হাতে বিদায় করে দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জের তারাব, ভুলতা, গোলাকান্দাইল ও কাঞ্চন এলাকা নিয়ে শিল্প এলাকা গড়ে উঠেছে। এখানে টেক্সটাইল, গার্মেন্টসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩০০ শিল্পকারখানা রয়েছে। রবিনটেক্স টেক্সটাইল, পদ্মা টেক্সটাইল, অনুপম হোসিয়ারি, অনন্ত নিটিং অ্যান্ড ফিনিশিং, শরীফ মেলামাইন, বাংলাদেশ মেলামাইনসহ অসংখ্য শিল্পকারখানা রয়েছে। করোনার অজুহাতে রবিনটেক্স টেক্সটাইল কারখানা, অনুপম হোসিয়ারি, অন্তিম নিটিং অ্যান্ড ফিনিশিং ও পদ্মা টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক দিনে এসব শিল্পকারখানা থেকে ৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারখানাগুলো শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে দু’টি কৌশল ব্যবহার করছেন। রবিনটেক্স টেক্সটাইল, অন্তিম নিটিং অ্যান্ড ফিনিশিং ও পদ্মা টেক্সটাইলে শ্রমিকদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক তিন মাসের ছুটির আবেদনে স্বাক্ষর নিয়ে বেতন ছাড়াই বিদায় করে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনুপম হোসিয়ারি ভিন্ন পন্থা নিয়েছে। এরা শিক্ষানবিশ শ্রমিক নিয়োগের কথা বলে শ্রমিক ছাঁটাই করছেন। এ কারখানা থেকে গত এপ্রিল মাসে ১৯৭ জন, মে মাসে ২৮ জন ও জুন মাসে ১২৪ জন শ্রমিককে অনুপস্থিত দেখানো হয়। অনুপম হোসিয়ারির সহকারী ম্যানেজার (প্রশাসন) মো: সেন্টু তালুকদার বলেন, অনুপম হোসিয়ারিতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কোনো ঘটনা নেই। যেসব শ্রমিক বের করে দেয়া হয়েছে, তারা সবাই শিক্ষানবিশ ছিল।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর চ্যাপ্টার দুইতে ছাঁটাই, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুতি সম্পর্কে আলাদা ব্যাখ্যা আছে। বলা আছে, চাকরি হারানোর সবচেয়ে বড় শাস্তি ধরা হয় বরখাস্ত হওয়ার বিষয়টিকে। কোনো শ্রমিক যদি কোনো ধরনের অন্যায়, অপরাধ ও অসদাচরণ করে তা হলে এটি করা হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা আউখাব, মতুর্জাবাদ, বলাইখা, গোলাকান্দাইল নামাপাড়া এলাকায় বসবাস করছে। এসব এলাকার বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেরই বাড়ি ভাড়া বকেয়া পড়ে আছে। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের নিদারুণ কষ্টের কথা। অনেক শ্রমিক অর্ধহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। অনেকের বাসা ভাড়া বকেয়া রয়েছে। কথা হয় শ্রমিক মিনহাজ, আরিফ, আশরাফুল, নুর আলম, মোশারফ, মাসুম, মায়েজ ও মাসুদের সঙ্গে। তারা বলেন, রবিনটেক্স টেক্সটাইলের টেক্সটাইল বিভাগের ৪৫০ শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি বলে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর নিচ্ছে। তবে কোনো বেতন, ঈদ বোনাস ও শ্রম আইনে কোনো সুবিধা না দিয়েই শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। এসব শ্রমিক এখন কষ্টে দিন পার করছে।
কাওসার মিয়া। রবিনটেক্স টেক্সটাইল থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর থেকে হন্যে হয়ে ঘুরছেন চাকরির আশায়। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী, ৯ বছরের মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার। মেয়ের প্রতিদিনের বায়না, মা-বাবার ওষুধ আর সংসারের খরচ টানতে গিয়ে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয় কাওসারের। এর ওপর চলে গেছে চাকরি। কাওসার মিয়া বলেন, আমাগো গরিবের পেটে লাথি দিয়া কি লাভ হেগো। ৭-৮ বছর ধইরা কাম করতাছি, অহন কয় তিন মাসের লেইগ্যা ছুটি। ফরম দিছে সই করার লেইগ্যা। না করলে ভয় দেহায়। হগলতেরে এইভাবেই সই নিছে। অহন কি করমু। চোহে হউরা (সর্ষে) ফুল দেখতাছি ভাই। চাকরিই খুঁজমু, নাকি ঘরের মাইনসের খাওয়ন জোগামু। আল্লায় হেগো উপড়ে গজব দেবো।
রবিনটেক্স টেক্সটাইল কারখানার প্রশাসন বিভাগের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement