রাজধানীতে কমেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ০৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০
বিশ^ মহামারী করোনার মধ্যে আরেক প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গু দেখা দেয়ায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠলেও রাজধানীবাসীর জন্য সুসংবাদ হচ্ছে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেছে। দুই সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রমের ব্যাপকতায় মশার উৎপাত কমে যাওয়ায় অবস্থার উন্নতি হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশকনিধন ওষুধের প্রয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি নালা, নর্দমা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন মশা নিধনে চিরুনি অভিযানের পাশাপাশি নগরবাসীর জন্য বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এতে দেখা গেছে, গত দেড় মাসে মাত্র ১৭৫ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র সাতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ মাত্র ৪ ভাগ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
গত বছর দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এডিস মশাবাহিত এ রোগে ২০১৯ সালে ১৭৯ জন মারা যান। সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস এডিস মশার বিস্তার ঘটে থাকে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে কেউ মারা যাননি বলে জানা গেছে। এ বছর দুই সিটি করপোরেশন আগেভাগেই মশা নিধন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন গত ১১ মে থেকে পাঁচটি নগর মাতৃসদন এবং ২২টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এরপর গত ২২ জুন আরো ১৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তারা। এ নিয়ে ৪০টি কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে নগরবাসী। পরীক্ষার সাথে সাথেই ফলাফল জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত দেড় মাসে ৪০টি কেন্দ্রে ১৭৫ জন ব্যক্তি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র সাতজন আক্রান্ত হয়েছেন, যা মোট পরীক্ষা করা ব্যক্তির মধ্যে মাত্র চার ভাগ। তবে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য এখনই আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে গত ৬ জুন থেকে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়। একইভাবে প্রতি মাসে ১০ দিন করে আবারো চিরুনি অভিযান চালাবে ডিএনসিসি। আগামী ৪ জুলাই থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় দফা অভিযান। এ ছাড়া ডিএনসিসি এলাকার ১৭২টি হাসপাতালে বিশেষ মশকনিধন অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। ডিএনসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল গোলাম মোস্তফা সরোয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার কেন্দ্র আরো বাড়ানো হবে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তিনি জানান, যে সাতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বাড়ির এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষ মশক অভিযান চালানো হয়েছে। যাতে তাদের কাছ থেকে অন্যদের মাঝে ডেঙ্গু না ছড়ায়। গত চিরুনি অভিযানে নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে জানিয়ে গোলাম সরোয়ার বলেন, এ ব্যাপারে আমরা তাদেরকে সতর্ক করেছি। তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। তারা যদি সচেতন না হন তাহলে আরো কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে।
একইভাবে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে লার্ভিসাইডিং ও অ্যাডালটিসাইডিং, প্রয়োগ কচুরিপানা, নালা পরিষ্কার এবং বাড়ি বাড়ি অভিযান।
গত ১৪ জুন থেকে জলাশয়, লেক, খাল ও নর্দমা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো শুরু হয়। এ ছাড়া প্রতি বিঘা জলাশয়ে আনুমানিক তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০টি তেলাপিয়া এবং ২৫টি হাঁস চাষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওষুধ প্রয়োগের সময় ও লোকবল বাড়িয়েছে ডিএসসিসি। প্রতিদিন প্রতি ওয়ার্ডে আটজন মশককর্মীর মাধ্যমে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং এবং প্রতিদিন প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জন মশককর্মীর মাধ্যমে বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফগিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া অনলাইন আবেদনের মাধ্যমেও নাগরিকরা নিজের বাসায় ওষুধ প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আশা করি এর মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্তি দিতে পারব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা